ভারত-পাকিস্তানের দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী ইতিহাসে বহুবার যুদ্ধের দামামা বেজেছে। কখনো ধর্মকে পুঁজি করে, কখনো অভ্যন্তরীণ কোন্দলে, দুই দেশ একে অপরের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। কাশ্মীরের বরফঢাকা পর্বত থেকে মরুভূমির উত্তপ্ত বালুকা পর্যন্ত সীমান্ত বহুবার রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। কখনো আকস্মিক আক্রমণ, কখনো সীমান্ত রক্ষার মরিয়া প্রচেষ্টা, আবার কখনো আদর্শের লড়াইয়ে দুপক্ষ যুদ্ধের ময়দানে নেমেছে।
ভারত ভাগের পর, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মূলত কাশ্মীরকে কেন্দ্র করেই এই যুদ্ধের সূচনা ঘটে। কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে পাকিস্তান সমর্থিত বিশেষ বাহিনী কাশ্মীরে হামলা চালায়। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয় এবং কাশ্মীর দুই ভাগে বিভক্ত হয়। ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে, আর পাকিস্তান আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিট-বালতিস্তানের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
পরবর্তীতে, ১৯৫৬ সালে দ্বন্দ্বের নতুন সূচনা হয়, যা ১৯৬৫ সালের জানুয়ারিতে তীব্র আকার ধারণ করে। পাকিস্তানি সীমান্তরক্ষীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পাহারা দিতে শুরু করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রথমে সীমান্ত পুলিশদের মধ্যে সংঘর্ষ হলেও পরে দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনী এতে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৫ সালের জুনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসনের মধ্যস্থতায় উভয় দেশ সংঘর্ষ বন্ধে সম্মত হয়। ১৯৬৮ সালে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে পাকিস্তান কচ্ছ অঞ্চলের ৩,৫০০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ৩৫০ বর্গকিলোমিটার ভূমির অধিকার পায়।
এরপর ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধ হয়, যা তুলনামূলকভাবে আগের যুদ্ধগুলোর মতো রক্তক্ষয়ী না হলেও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শীতকালে ভারতীয় সেনারা তাদের চৌকি ছেড়ে আসার পর, পাকিস্তানপন্থী কাশ্মীরি গোষ্ঠী কিছু চৌকি দখল করে নেয়। শীত শেষে ফিরে এসে ভারতীয় সেনারা তা আবিষ্কার করে এবং কাশ্মীর সীমান্তে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক চাপের ফলে মাত্র দুই মাসের মাথায় যুদ্ধের অবসান ঘটে।
এসব যুদ্ধ-সংঘাত ছাড়াও ভারত-পাকিস্তান নানা সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। তবে প্রায় সব বড় সংঘাতই কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করেই ঘটেছে।