বাঙালির উৎসবপ্রেমী মনন বরাবরই প্রশংসার দাবি রাখে। ধর্মীয়, জাতীয়, রাষ্ট্রীয় কিংবা সাংস্কৃতিক—সব ধরণের উৎসবই বাঙালি আপন করে নেয় আন্তরিক আনন্দে। তবে বাংলা নববর্ষ, অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ, হলো বাঙালি জাতিসত্তার অন্যতম বৃহৎ ও সর্বজনীন উৎসব। আজ শুরু হলো বঙ্গাব্দ ১৪৩২, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রাজধানী ঢাকাজুড়ে আয়োজন করা হয়েছে নানা রঙিন উৎসব।
রবীন্দ্র সরোবর
ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ‘সুরের ধারা’। ভোর ৬টা থেকে মুক্তমঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, যেখানে সমতল ও পাহাড়ি এলাকার নানা জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ফুটে ওঠে সুর, নৃত্য ও কথার মাধ্যমে। অনুষ্ঠানস্থলের চারপাশে ছিল বাহারি বাঙালি খাবারের পসরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
‘নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্যে বর্ষবরণ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। সকাল ৯টায় শুরু হয় বর্ণাঢ্য ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। এবারের শোভাযাত্রায় ছিল সাতটি বিশাল মোটিফ—ফ্যাসিবাদের বিকৃত মুখাকৃতি, কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, তরমুজের ফালি (ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে), শান্তির প্রতীক পায়রা, ঐতিহ্যবাহী পালকি এবং পানির বোতল (মীর মুগ্ধের স্মৃতিচারণায়)।
মূল মোটিফের পাশাপাশি ছিল আরও শিল্প-অবকাঠামো—সুলতানি আমলের দশটি মুখোশ, ২০টি রঙিন চরকি, আটটি তালপাতার সেপাই, পাঁচটি তুহিন পাখি, চারটি পাখা, ২০টি লোকজ ঘোড়া এবং ১০০ ফুট দীর্ঘ চিত্রিত ক্যানভাস। ছোট মোটিফগুলোর মধ্যে ছিল ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, ২০০টি বাঘের মাথা, ১০টি পলো, ছয়টি চাঁই, ২০টি মাথাল, পাঁচটি লাঙল এবং মাছ বহনের ডোলা। চারুকলা অনুষদের সীমানা প্রাচীরও সেজেছে রাজশাহীর শখের হাঁড়ির মোটিফে ফুল, পাখি ও লতাপাতার চিত্রে।
জাতীয় সংসদ ভবন
নববর্ষ উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং চীনা দূতাবাসের কারিগরি সহায়তায়, জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে আয়োজন করা হয়েছে ড্রোন-শো এবং ব্যান্ড-শো। এই আয়োজনের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, সহযোগিতায় রয়েছে জাতীয় সংসদ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
শাহবাগ
‘ঐ নতুনের কেতন ওড়ে’ শিরোনামে সাংস্কৃতিক ঐক্যফ্রন্ট আয়োজন করেছে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হচ্ছে বাংলা গান, দেশাত্মবোধক সুর, জারিসারি, পুঁথিপাঠ, গম্ভীরা এবং নাটিকা। এতে অংশ নিচ্ছে ১৪টি শিল্পীগোষ্ঠী।
রাজধানীর অন্যান্য আয়োজন
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাতেও বসেছে বৈশাখী মেলা ও উৎসবের নানা আয়োজন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো—উত্তরার দিয়াবাড়ি, সুত্রাপুরের ধূপখোলা মাঠ, ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড এবং পূর্বাচলের তিনশ ফুট এলাকা। এসব জায়গায় উৎসবের দিনে দর্শনার্থীদের ভিড় হবে প্রাণবন্ত ও জমকালো।