স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন যেসব অ্যাপ ব্যবহার করেন, তার অনেকগুলোই গোপনে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে—এমন আশঙ্কাজনক তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘হুইচ’ সম্প্রতি একটি বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় অ্যাপ অপ্রয়োজনীয় ও স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ওপর নজরদারি করছে।
বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এসব অ্যাপ ব্যবহারকারীর সুনির্দিষ্ট অবস্থান, ফোনের মাইক্রোফোন ও স্টোরেজ ফাইল ব্যবহারের অনুমতি চায়, যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব তথ্য প্রয়োজন হয় না। এ বিষয়ে হুইচের সম্পাদক হ্যারি রোজ বলেন, “দেখতে সাধারণ মনে হলেও অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবহার করেই চলে, অনেক সময় অতিরিক্তভাবে।”
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জনপ্রিয় ২০টি অ্যাপ একসঙ্গে ইনস্টল করলে মোট ৮৮২টি অনুমতি চাওয়া হয়, যার মধ্যে অনেকগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে শাওমির স্মার্ট হোম অ্যাপ ‘শাওমি হোম’ ৯১টি অনুমতি চায়, যার মধ্যে ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ। এরপর রয়েছে স্যামসাংয়ের ‘স্মার্টথিংস’ অ্যাপ (৮২টি অনুরোধ, ৮টি ঝুঁকিপূর্ণ), ফেসবুক (৬৯টি অনুরোধ, ৬টি ঝুঁকিপূর্ণ) এবং হোয়াটসঅ্যাপ (৬৬টি অনুরোধ, ৬টি ঝুঁকিপূর্ণ)।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুমতি চায় ফেসবুক অ্যাপ। এরপর আছে হোয়াটসঅ্যাপ (৬৬টি), ইউটিউব (৪৭টি, এর মধ্যে ৪টি ঝুঁকিপূর্ণ) এবং টিকটক (৪১টি, ৩টি ঝুঁকিপূর্ণ)। ২০টি অ্যাপের মধ্যে ১৬টি অ্যাপ এমন অনুমতি চায়, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের সম্মতি ছাড়াই অন্য অ্যাপের পপআপ চালু করা সম্ভব। ৭টি অ্যাপ এমন অনুমতি নেয়, যার ফলে ফোন চালু করলেই তা ব্যাকগ্রাউন্ডে সক্রিয় হয়ে যায়। এসব ঝুঁকিপূর্ণ অনুমতির মধ্যে রয়েছে মাইক্রোফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু/বন্ধ করা, সুনির্দিষ্ট অবস্থান নির্ধারণ, ও ডিভাইসে সংরক্ষিত ফাইল পড়ার সুযোগ।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তথ্যগুলো বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব তথ্য ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর আচরণ বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন পাঠানো হয়।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। মেটা জানিয়েছে, ব্যবহারকারীদের সম্মতি ছাড়া ব্যাকগ্রাউন্ডে মাইক্রোফোন ব্যবহার করা হয় না। স্যামসাং জানায়, তাদের অ্যাপ তথ্য সুরক্ষা আইন মেনেই পরিচালিত হয়। টিকটকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা তাদের সেবার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ করা হয়।