নড়াইলের মেয়ে সাদিয়া রহমান মৌ ২০০৪ সালে জন্ম নেওয়ার পর থেকেই শৃঙ্খলিত পরিশ্রম আর পিতা-মাতার অনুপ্রেরণায় বেড়ে উঠেছেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মায়ের হাত ধরে টেবিল টেনিসের সঙ্গে পরিচয় — যেখানে খেলাধুলার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। বাবার অসুস্থতাজনিত পারিবারিক চাপ দূর করতে মায়ের উৎসাহই ছিল সাদিয়ার প্রথম প্রেরণা।
২০১৫ সালে, মাত্র ১১ বছর বয়সে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী থাকা অবস্থায় দেশের সর্বকনিষ্ঠদের একজন হিসেবে জাতীয় দলে ডাক পান সাদিয়া। নাচের প্রতিযোগিতায় কলকাতা যাওয়ার প্রস্তুতির মাঝপথে স্থানীয় টেবিল টেনিস টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই তাঁর জাতীয় পর্যায়ে উত্থানের দরজা খুলে দেয়।
জাতীয় মঞ্চে এর পর তার সাফল্যের ধারা অব্যাহত — বাংলাদেশ গেমসে তিনটি এবং যুব গেমসে দুটি স্বর্ণ, সর্বশেষ জাতীয় প্রতিযোগিতায় একক শিরোপা জয়ে শীর্ষস্থান দখল। আন্তর্জাতিক পরিসরে ২০১৬ গৌহাটি–শিলং এসএ গেমসে দলগত ব্রোঞ্জ, ২০১৯ কাঠমান্ডু এসএ গেমসে নারীদের ডাবলসে ব্রোঞ্জ, ২০২২ ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে একমাত্র বাংলাদেশি নারী হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার কৃতিত্ব অর্জন করেন। কমনওয়েলথ গেমস ও জুনিয়র সাউথ এশিয়ান গেমসে অংশ নিয়েও পদক সংগ্রহ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞানে অধ্যয়নরত সাদিয়া পড়াশোনা, স্বাস্থ্যসচেতনতা এবং খেলাধুলার সমন্বয়ে নিজেকে গড়ে তুলছেন; ভবিষ্যতে টেবিল টেনিসের প্রসার ও পুষ্টিবিষয়ক সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে চান। তবে সবচেয়ে বড় লক্ষ্য — দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে স্বর্ণপদক জিতে জাতীয় সংগীত বাজানো। উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের চেয়ে অবকাঠামোগত পিছিয়ে পড়ায় হতাশ হলেও তিনি আশাবাদী—টেবিল টেনিস অচিরেই বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাবে, আর সেখানেই নিজেকে স্বর্ণজয়ী হিসেবে দেখতে চান সাদিয়া।