মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় উন্মুক্ত হচ্ছে, যেখানে স্বল্প ব্যয়ে এবং শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক বিনা খরচে পাঠানো হবে। এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার, ১৫ মে মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় দেশটির স্বরাষ্ট্র ও মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে অংশ নিচ্ছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া এবং উপসচিব মো. সরোয়ার আলম।
মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় সুখবর। জানা গেছে, দেশটির সাধারণ শ্রমিকদের বেতন মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় দ্বিগুণ বা তারও বেশি, যা বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য আর্থিকভাবে লাভজনক। দীর্ঘদিন ধরে কিছু ব্যবসায়ী বিরোধের কারণে শ্রমবাজারটি অনিশ্চয়তায় থাকলেও এখন ধীরে ধীরে সেই জটিলতা কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানান, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা ও ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়ে টানাপোড়েনের কারণে শ্রমবাজার পরিচালনায় জট তৈরি হয়েছে। সরকার এই অবস্থার উত্তরণে ব্যবসায়িক স্বার্থের চেয়ে শ্রমিকের সুরক্ষা ও স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। এতে দেশের বৈদেশিক রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাবে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, সরকার বা মন্ত্রণালয়ের কাজ ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ সংগ্রহ করা নয়; বরং যারা নিজেরা বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকল্প আনতে পারবে, তাদেরই শ্রমিক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু একশ্রেণির ব্যবসায়ী নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে আন্দোলন, মানববন্ধন ও মিডিয়ায় অপপ্রচারে লিপ্ত হয়ে পড়ছে, যা একপ্রকার অপসংস্কৃতি তৈরি করছে।
এছাড়া নানা অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা-মোকদ্দমা ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে শুধু মালয়েশিয়া নয়, অন্যান্য দেশেও বাংলাদেশের শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বৈধভাবে যাওয়ার পরও মানব পাচার ও অর্থপাচার আইনে মামলা হওয়ায় দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে এবং রিসিভিং কান্ট্রিগুলোও এই অবস্থার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে এবং জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে এই পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান জরুরি। মালয়েশিয়ায় স্বচ্ছ, খরচ-সাশ্রয়ী ও নৈতিক অভিবাসন নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।