পেহেলগামে ২২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলার জবাবে ভারতের চালানো ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুধু সীমান্তে সীমাবদ্ধ থাকেনি, তার প্রভাব এসে পড়েছে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনেও। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিশোধমূলক হামলায় পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করার দাবি করেছে ভারত। এই ঘটনার রেশ এসে লেগেছে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)-এ, যেখানে অংশগ্রহণকারী বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
৮ মে বৃহস্পতিবার রাতে রাওয়ালপিন্ডিতে করাচি কিংস ও পেশোয়ার জালমির মধ্যকার ম্যাচটি হওয়ার কথা থাকলেও, ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে একটি ভারতীয় ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। এর পরপরই ম্যাচটি স্থগিত করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। একই সঙ্গে পরদিনের লাহোর বনাম জালমির ম্যাচটিও বাতিল করা হয়।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোরের কিছু জায়গায় পাকিস্তানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও ভারতীয় হামলায় ধ্বংস হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ইংল্যান্ডের সাতজন ক্রিকেটার—জেমস ভিন্স, টম কারান, স্যাম বিলিংস, ক্রিস জর্ডান, ডেভিড উইলি, লুক উড এবং টম কোলার-ক্যাডমোর। তারা দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন ইংলিশ কোচ রবি বোপারা ও আলেক্সান্ড্রা হার্টলি।
শুধু ইংলিশরাই নন, পাকিস্তানে থাকা বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার নাহিদ রানা ও রিশাদ হোসেনও এই ঘটনার পর দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে একটি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম।
একজন ক্রিকেট এজেন্ট জানিয়েছেন, ‘‘সবকিছু এখনও স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হলেও, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি আবার কোনো হামলা হয়, তাহলে অনেক খেলোয়াড় হয়তো পাকিস্তান ছেড়ে দেবেন।’’
তবে খেলোয়াড়দের চাইলেই পাকিস্তান ছাড়ার সুযোগ নেই। পিসিবির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘আকাশসীমা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’
এ অবস্থায় পিএসএল বিদেশে সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা আলোচনায় এলেও, খরচ ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে তা বাস্তবায়ন কঠিন বলে মনে করছে পিসিবি। তবে দোহা ও দুবাইকে সম্ভাব্য বিকল্প ভেন্যু হিসেবে বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
পিএসএলের গ্রুপ পর্বের বাকি ছিল মাত্র ছয়টি ম্যাচ—তিনটি রাওয়ালপিন্ডিতে, একটি মুলতানে। এরপর ১৩ মে কোয়ালিফায়ার, ১৪ ও ১৬ মে এলিমিনেটর এবং ১৮ মে লাহোরে ফাইনাল হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সময়সূচি ও ভেন্যু সবই অনিশ্চয়তার মুখে।
পেহেলগামের হামলার পর থেকে ভারতের সম্প্রচার সংস্থা সনি ও ফ্যানকোড পিএসএলের সম্প্রচার বন্ধ রেখেছে। ফলে ভারতীয় দর্শকরাও আর খেলাটি সরাসরি দেখতে পাচ্ছেন না।