লবণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য উপাদান। ভাত কিংবা যেকোনো খাবার লবণ ছাড়া স্বাদহীন মনে হয়। বাজারে সাধারণ সাদা লবণ, হিমালয়ের রক সল্ট, পিঙ্ক সল্ট বা ডায়েট সল্ট—সবই সহজলভ্য এবং দামের দিক থেকেও নাগালের মধ্যে। তবে জানেন কি, কোরিয়ার এক ধরনের বিশেষ লবণের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা! নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া এই লবণের নাম কোরিয়ান বাঁশের লবণ বা জুকইওম (Jukyeom)।
কীভাবে তৈরি হয় জুকইওম?
এই লবণকে বলা হয় পৃথিবীর অন্যতম শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়ায় তৈরি লবণ। সমুদ্র থেকে আনা সাধারণ লবণ ভরে দেওয়া হয় বাঁশের ক্যানিস্টারে, যা পরে হলুদ কাদামাটি দিয়ে সিল করা হয়। এরপর এগুলোকে লোহার চুল্লিতে পাইন কাঠের আগুনে প্রায় ৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে ১২–১৪ ঘণ্টা ধরে পোড়ানো হয়। এ প্রক্রিয়া একবারে শেষ হয় না, বরং নয়বার পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি করা হয়। প্রতিবার পোড়ানোর ফলে লবণে যুক্ত হয় বাঁশ ও কাদার খনিজ উপাদান, অশুদ্ধি বের হয়ে যায় এবং স্বাদ হয়ে ওঠে অনন্য। কোরিয়ানরা এই বিশেষ স্বাদকে বলেন ‘গামরোজুং’ (Gamrojung)। এর রঙ, গঠন ও স্বাদ—সবকিছুতেই তৈরি হয় বিশেষত্ব।
কেন এত দাম?
মূলত দুর্লভ ও প্রাচীন প্রস্তুত প্রণালি, দীর্ঘ সময় ধরে পোড়ানোর জটিলতা, অনন্য স্বাদ ও খনিজসমৃদ্ধ গুণাগুণই এর উচ্চ মূল্যের কারণ। জুকইওমকে শুধু রান্নার উপাদান নয়, বরং স্বাস্থ্যকর ভেষজ হিসেবেও গণ্য করা হয়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
কোরিয়ান লোকচিকিৎসায় বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বাঁশের এই লবণ। আধুনিক গবেষণাতেও মিলেছে এর নানা উপকারের প্রমাণ—
ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক: নয়বার পোড়ানো বাঁশের লবণ কোলন ও জিহ্বার ক্যানসার সেলের বৃদ্ধি ৫০ শতাংশের বেশি কমাতে সক্ষম হয়েছে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ: এটি শরীরে ইমিউন প্রতিক্রিয়া বাড়ায়, সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং পেটের সুরক্ষা দেয়।
ত্বক ও দাঁতের যত্নে উপকারী: বাঁশের লবণ কোলাজেন ধরে রাখে, ত্বকের বার্ধক্য কমায় এবং দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির প্রদাহ প্রতিরোধে সহায়ক।
শেষ কথা
আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহৃত সাধারণ লবণের সঙ্গে এই কোরিয়ান বাঁশের লবণের কোনো মিল নেই। দাম আকাশছোঁয়া হলেও কোরিয়ায় শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি স্বাস্থ্যকর ভেষজ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই বলা যায়, জুকইওম শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, বরং সুস্থতা রক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।