আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। কিন্তু কিডনির সমস্যা হলে তা অনেক সময় ধরা পড়ে দেরিতে, কারণ প্রাথমিক উপসর্গগুলো হয় বেশ মৃদু। কিডনিতে পাথর হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, যেখানে লবণ ও খনিজ পদার্থ জমে কঠিন আকার ধারণ করে। ছোট পাথর কখনো কখনো নিজে থেকেই শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, তবে বড় বা জটিল পাথর বিভিন্ন জটিলতা ও সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, কিডনিতে পাথর থাকার কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে, যেগুলো অবহেলা করলে ভবিষ্যতে বড় বিপদের কারণ হতে পারে। সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এমনই পাঁচটি লক্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
১. তীব্র বা ধারালো ব্যথা
কিডনিতে পাথরের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো তীব্র ব্যথা। এই ব্যথা পিঠের নিচে বা শরীরের একপাশে শুরু হয়ে নিচের দিকে, এমনকি কুঁচকি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ঢেউয়ের মতো আসে-যায় এই ব্যথা, যা বিশ্রামে কমে না। চিকিৎসক ডা. শ্যাম বর্মা জানিয়েছেন, এটা সাধারণ পেশির ব্যথা নয়; বরং ইউরেটারে পাথরের নড়াচড়ার ফলে সৃষ্ট খিঁচুনি।
২. প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা রক্ত
পাথর যখন মূত্রনালিতে নামতে শুরু করে, তখন প্রস্রাবে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে। কখনো কখনো প্রস্রাবে লাল, বাদামি বা গোলাপি রঙের রক্তও দেখা দিতে পারে। অনেক সময় এই রক্ত খালি চোখে ধরা না পড়লেও পরীক্ষায় পাওয়া যায়। মূলত পাথরের ঘর্ষণে মূত্রনালিতে ক্ষত হলে এই সমস্যা হয়।
৩. প্রস্রাবের রঙ ও গন্ধে পরিবর্তন
পাথরের কারণে মূত্রপ্রবাহ ব্যাহত হলে সংক্রমণ হতে পারে। এর ফলে প্রস্রাব ঘোলা ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়ে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ, যা অবহেলা করা একেবারেই উচিত নয়।
৪. ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ
একটানা বারবার প্রস্রাবের বেগ আসা, অথবা অল্প অল্প করে প্রস্রাব হওয়া—এই লক্ষণটিও কিডনিতে পাথরের ইঙ্গিত হতে পারে। যদিও দেখতে ইউরিনারি ইনফেকশনের মতো মনে হয়, সংক্রমণ না থাকলে এটি পাথরের লক্ষণ হিসেবেই ধরা উচিত।
৫. বমি বমি ভাব
ডা. আশ্বথী হরিদাস জানিয়েছেন, তীব্র ব্যথার কারণে শরীর স্ট্রেস রেসপন্স দেখায়, যার ফলে বমি বা বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। কিডনি ও হজমতন্ত্রের স্নায়ু সংযুক্ত থাকায় এই চাপ হজমে প্রভাব ফেলে।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
কিডনিতে পাথরের লক্ষণ অনেক সময় তার আকার ও অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। ছোট পাথর নীরবে বের হয়ে গেলেও, যদি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, প্রস্রাবে রক্ত বা রঙ-গন্ধে পরিবর্তন দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রস্রাব পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান-এর মাধ্যমে সহজেই রোগ ধরা যায়। দ্রুত ধরা পড়লে পানি পান, ওষুধ, লিথোট্রিপসি বা ছোট সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। তবে উপসর্গ উপেক্ষা করলে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।