মাত্র সপ্তম শ্রেণি পেরিয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার সময় হঠাৎ করেই বিয়ে হয়ে যায় রুপা খাতুনের। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে স্কুলজীবন উপভোগ করার বয়সেই বই-খাতা ছেড়ে তাকে নেমে পড়তে হয় সংসারের কাজে। তবে নিজের স্বপ্নকে একেবারে ছাড়েননি তিনি। সেই রান্নাঘরকেই কাজে লাগিয়ে আজ তিনি সফল নারী উদ্যোক্তা।
যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের ইখতার আলীর স্ত্রী রুপা খাতুন বর্তমানে পরিচিত ‘কাঁঠালের চিপস কারিগর’ হিসেবে। বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন ‘রেইনবো অ্যাগ্রো ফুড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে তিনি তৈরি করেন নানা ধরনের আচার, জ্যাম-জেলি, কুমড়োর বড়ি, গুড়-পাটালি প্রভৃতি। চলতি বছর থেকেই শুরু করেছেন কাঁঠালের চিপস তৈরি, যা পেয়েছে দারুণ সাড়া। মাসে গড়ে এই চিপস থেকে তার আয় হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার টাকা।
রুপা খাতুন জানান, ২০১৯ সালে খাদ্যপণ্য তৈরির কাজে আগ্রহী হন এবং উন্নয়ন সংস্থা ‘সুশীলন’-এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর বিভিন্ন আচার, সস, জ্যাম-জেলি তৈরি করতে থাকেন। পরবর্তীতে ‘প্রিজম অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফুড’-এর অন দ্য জব প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে তিনি কাঁঠালের চিপস তৈরির কাজ শুরু করেন। শুরুতে অনেকে বিষয়টি নিয়ে হাসাহাসি করলেও এখন তার চিপস বেশ জনপ্রিয়।
চিপস তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানান, কাঁঠাল থেকে কোষ আলাদা করে আঁটি ফেলে দেওয়া হয়। তারপর কোষগুলো কেটে ভেজে নিয়ে তাতে মসলা মিশিয়ে প্যাকেট করা হয়। খুচরা বাজারে প্রতিটি প্যাকেট ২০ টাকায় বিক্রি হয় এবং দিনে গড়ে ৩০০ প্যাকেট তৈরি করেন তিনি।
রুপা খাতুন বলেন, বর্তমানে হাতে ভাজলেও ভবিষ্যতে মেশিনের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে চান। এজন্য প্রয়োজন ভ্যাকুয়াম ফ্রাইং, ডি-অয়েলিং ও প্যাকেজিং মেশিন। কাঁঠালের কোষ প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণ করলে আরও তিন মাস উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।
এই উদ্যোক্তা বর্তমানে যশোরে ‘পার্টনার-ডিএএম অঙ্গ’ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। প্রিজম হোটেল ম্যানেজমেন্ট স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান বশির আহমেদ চন্দন বলেন, নারীদের কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং রুপা খাতুন সফলতার একটি উদাহরণ।
প্রিজম অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুসলিমা খাতুন জানান, শুধু চিপস তৈরি নয়, রুপা খাতুন ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় ১,৮০০ কেজি প্রসেসিং কাঁঠাল সরবরাহ করেছেন। তিনি একজন আত্মনির্ভরশীল সফল নারী উদ্যোক্তা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যশোরের সিনিয়র কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা বলেন, শুধু রুপা খাতুনই নন, দেশের বহু নারী ও তরুণ উদ্যোক্তার পাশে আছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। যন্ত্রপাতি পেতে যেন রুপা সহ অন্যান্য উদ্যোক্তারা সুবিধা পান, সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।