এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কেউ হাসছে, কেউ হতাশায় ডুবেছে। ফল খারাপ হওয়া মানেই জীবন থেমে যাবে—এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন লক্ষ্মীপুরের গ্রামের ছেলে মেহরাব হোসেন রবিন। এসএসসিতে ইংরেজিতে ‘সি’ গ্রেড পাওয়া এই তরুণ এখন আমেরিকার লুইজিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটিতে ফুল-ফান্ডিং স্কলারশিপে পিএইচডি করছেন সাইবারস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ।
রবিনের শিক্ষা-জীবনের শুরু ২০০৮ সালে, লক্ষ্মীপুরের দালালার বাজার এন. কে. উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ পেয়েছিলেন মাত্র ৩.৮৮। ইংরেজিতে পেয়েছিলেন মাত্র ২.০—যা ছিল তার সবচেয়ে বড় বাধা। আশেপাশের বন্ধুরা জিপিএ-৫ পেয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে গেলেও রবিন তখন হতাশা, তিরস্কার আর আত্মবিশ্বাসের সংকটে ভুগছিলেন।
ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে বাবার জোরে ভর্তি হন লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। সেখানেই শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়। চারপাশের অবহেলা ও কটাক্ষকে শক্তিতে পরিণত করে রবিন নিজের দুর্বলতা চিহ্নিত করেন। গণিতে ছিলেন ভালো, আর দুর্বলতা ছিল ইংরেজি ও কমিউনিকেশন স্কিলে। তাই নিজেকে পাল্টাতে তিনি যুক্ত হন ডিবেট ক্লাব, টিআইবি-র ইয়েস গ্রুপ ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে। ফলস্বরূপ, ২০১২ সালে ডিপ্লোমা পরীক্ষায় ৪.০০ এর মধ্যে ৩.৬০ সিজিপিএ নিয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।
এরপর তিনি বিইউবিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক সম্পন্ন করেন। বিদেশে পড়ার স্বপ্ন তখনই জন্ম নেয়, কিন্তু ইংরেজি দক্ষতা ছিল প্রধান বাধা। সরকারি বিভিন্ন আইটি প্রশিক্ষণ নেন এবং ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। তবে জিআরই ও আইইএলটিএস পরীক্ষায় বারবার ব্যর্থ হন।
তবুও তিনি থেমে থাকেননি। ইংরেজি শেখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান, আর চাকরি করতে করতেই ২০২১ সালে ভারতের দিল্লি টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি-তে ভারত সরকারের স্কলারশিপে মাস্টার্স শুরু করেন। এখানেই তার তিনটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশিত হয়, যা তার একাডেমিক প্রোফাইলকে শক্তিশালী করে তোলে।
২০২৩ সালে দেশে ফিরে চ্যানেল আই-তে পুনরায় যোগ দেন এবং মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডির আবেদন শুরু করেন। তিনি একে একে স্যাম হিউস্টন স্টেট ইউনিভার্সিটি, ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি, এবং লুইজিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি অফার পান। শেষ পর্যন্ত তিনি লুইজিয়ানা টেকে ফুল-ফান্ডিং নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এখন তিনি পোস্ট-কোয়ান্টাম সাইবার সিকিউরিটি ও ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত।
আজ যারা এসএসসিতে কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে হতাশ, রবিন তাদের উদ্দেশে বলেন:
“আমি যদি পারি, তুমিও পারবে। নিজের উপর বিশ্বাস রাখো। স্বপ্ন বড় করো, কঠোর পরিশ্রম করো। তোমার গল্পও একদিন অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে উঠবে।”