যুক্তরাজ্যে এক নজিরবিহীন চিকিৎসা ঘটনা ঘটেছে, যেখানে একটি শিশু দুবার জন্মগ্রহণ করেছে—প্রথমবার চিকিৎসার প্রয়োজনে এবং দ্বিতীয়বার প্রকৃত অর্থে পৃথিবীর আলো দেখেছে। এই বিরল অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাওয়া মা লুসি জন র্যাডক্লিফ এবং তার সন্তান র্যাফার্টি আইজ্যাক এখন সুস্থ রয়েছেন। এ জন্য তারা চিকিৎসকদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। শনিবার (১৯ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩২ বছর বয়সী লুসি যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তখন একটি নিয়মিত আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় তার ডিম্বাশয়ের ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা জানান, সন্তান জন্মের পর চিকিৎসা শুরু করলে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল, যা লুসির জীবনকে বিপদের মুখে ফেলত। গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি পর্যায়ে হওয়ায় সাধারণ পদ্ধতিতে সার্জারি করা সম্ভব ছিল না। এই কঠিন পরিস্থিতিতে শল্যচিকিৎসক ড. সোলেইমানি মাজেদের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল একটি জটিল ও উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন, যা বিশ্বজুড়ে হাতে গোনা কয়েকবারই সম্পন্ন হয়েছে।
‘প্রথম জন্ম’ ঘটে অক্টোবরে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লুসির জরায়ু এবং গর্ভস্থ শিশুকে অস্থায়ীভাবে শরীরের বাইরে আনা হয়, যাতে ক্যানসার অপসারণ করা সম্ভব হয়। সফলভাবে ক্যানসার অপসারণের পর জরায়ু এবং শিশুকে পুনরায় লুসির শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এরপর, কয়েক মাস ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে জানুয়ারিতে লুসি একটি সুস্থ পুত্রসন্তান জন্ম দেন, যার নাম রাখা হয় র্যাফার্টি আইজ্যাক।
র্যাফার্টির জন্মের পর লুসি ও তার স্বামী অ্যাডাম তাদের জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসক ড. মাজেদকে ধন্যবাদ জানাতে হাসপাতালে যান। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন চিকিৎসকও। লুসি জানান, আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার আগে তিনি কোনো উপসর্গ অনুভব করেননি, তাই সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাকে তিনি নিজের সৌভাগ্য বলে মনে করেন।
অ্যাডাম বলেন, “এত সংগ্রামের পর যখন আমরা র্যাফার্টিকে কোলে নিই, সেটা ছিল আমাদের জীবনের সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত।”
প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার নারী ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং এদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রেই রোগ দেরিতে শনাক্ত হয়, ফলে প্রতিবছর প্রায় চার হাজার নারী মৃত্যুবরণ করেন। লুসির এই ঘটনা শুধু বিরলই নয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী সাফল্যের প্রতীকও বটে।
এই গল্প কেবল একটি শিশুর ‘দুবার জন্মের’ ঘটনা নয়—এটি একজন মায়ের সাহস, একজন চিকিৎসকের নিষ্ঠা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের অসাধারণ জয়গাথা।