বিজ্ঞানীরা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি জীবিত কোলোসাল স্কুইডকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশে ক্যামেরাবন্দি করেছেন, যা এক শতাব্দীরও বেশি সময় আগে প্রজাতিটি আবিষ্কৃত হওয়ার পর এই প্রথম। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা একটি শিশু স্কুইড দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের সাউথ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জের কাছে ৬০০ মিটার গভীরতায় সাঁতরে বেড়াচ্ছে।
এই ফুটেজটি ধারণ করে শ্মিডট ওশান ইনস্টিটিউটের গবেষণা জাহাজ ফ্যালকর(২)-তে থাকা বিজ্ঞানীদের একটি দল। ইউনিভার্সিটি অব এসেক্সের ড. মিশেল টেইলরের নেতৃত্বে দলটি ৩৫ দিনের এক গভীর সমুদ্র অভিযানে অজানা সামুদ্রিক প্রাণী আবিষ্কারের লক্ষ্যে কাজ করছিল।
“আমরা শুরুতে বুঝতেই পারিনি এটি কী,” বলেন ড. টেইলার। “তবে এটি এতটাই সুন্দর ও ব্যতিক্রম ছিল যে আমরা ভিডিও ধারণ করেছিলাম।” পরবর্তীতে, বিখ্যাত সেফালোপড বিশেষজ্ঞ ড. কাট বলস্ট্যাড নিশ্চিত করেন এটি একটি শিশু কোলোসাল স্কুইড। এখন পর্যন্ত এই প্রজাতিকে মূলত তিমি ও সামুদ্রিক পাখির পেটে মৃতাবস্থায় বা মাছ ধরার সময় অর্ধমৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।
কোলোসাল স্কুইড (Mesonychoteuthis hamiltoni) প্রজাতিটি পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী অমেরুদণ্ডী প্রাণী হিসেবে পরিচিত। এরা পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ৭ মিটার পর্যন্ত লম্বা ও ৫০০ কেজি পর্যন্ত ওজনের হতে পারে।
“একটি কোলোসাল স্কুইডের শিশু অবস্থায় জীবন্ত দেখা সত্যিই রোমাঞ্চকর, এবং এ ভাবনাও বিস্ময়কর যে তারা জানেই না মানুষ বলে কিছু আছে,” বলেন ড. বলস্ট্যাড। “এই বিস্ময়কর মুহূর্তগুলো আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয়, মহাসাগর এখনো রহস্যে পূর্ণ এবং আমাদের অনেক কিছু শেখার বাকি,” বলেন শ্মিডট ওশান ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. জ্যোতিকা ভিরমানি।
এই অভাবনীয় আবিষ্কার শুধু কোলোসাল স্কুইডের আচরণ ও জীবনচক্র সম্পর্কে নতুন জানার সুযোগই এনে দেয়নি, বরং এটি প্রমাণ করেছে যে পৃথিবীর গভীর সমুদ্র এখনো অসংখ্য রহস্য লুকিয়ে রেখেছে, যা ভবিষ্যতের অনুসন্ধানীদের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়।