কোরবানির ঈদ মানেই খাবার টেবিলে গরুর মাংসের নানা পদ। তবে পুষ্টিবিদরা সতর্ক করছেন—গরুর মাংস পুষ্টিকর হলেও অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গরুর মাংসে উচ্চমাত্রার প্রোটিন, হিম আয়রন, জিংক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস এবং বি গ্রুপের ভিটামিন থাকে, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। প্রতি ১০০ গ্রাম মাংসে থাকে প্রায় ২৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ২ গ্রাম ফ্যাট।
তবে বিশেষ সতর্কতা দরকার। পুষ্টিবিদরা বলছেন, গরুর মাংস একটি অ্যালার্জিক খাবার এবং এতে সোডিয়াম ও কোলেস্টেরলের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি। বিশেষ করে গরুর মগজ ও কলিজায় প্রোটিন কম, কোলেস্টেরল বেশি। যারা ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগে ভুগছেন, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাংস খেতে হবে।
একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৫০ গ্রাম প্রোটিন যথেষ্ট। তবে কিডনি জটিলতায় এ পরিমাণ কমে অর্ধেকে নেমে আসে (২৫ গ্রাম)। আর গর্ভবতী নারী বা মাসিক চলাকালীন নারীদের ক্ষেত্রে এই চাহিদা দ্বিগুণ হতে পারে। আদর্শ ওজন অনুযায়ী কেউ কেউ ১০০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন গ্রহণ করতে পারেন, তবে এটি মোট খাদ্য থেকে হিসেব করা উচিত, শুধুমাত্র মাংস নয়।
এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, প্রোটিনের চাহিদা একক কোনো উৎস থেকে পূরণ করা উচিত নয়। যদি প্রতিদিনের চাহিদা পূরণে কেবল গরুর মাংস খাওয়ার কথা ভাবেন, তবে ২৭০ গ্রাম মাংস খেতে হবে, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কারণ শরীরের প্রোটিন প্রয়োজন বিভিন্ন খাবার থেকে পূরণ করা উত্তম।
পুষ্টিবিদদের মতে, ঈদের সময় গরুর মাংস খাওয়ার সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি হলো সপ্তাহে দুই দিন, সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৫ বেলায় খাওয়া। সপ্তাহে মোট ১৫৪ গ্রাম গরুর মাংস খাওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ প্রতিবারের বেলায় ঘরে রান্না করা মাংসের ২/৩ টুকরোই যথেষ্ট। বেশি খাওয়ার প্রবণতা হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, কিডনি সমস্যা, টাইপ-টু ডায়াবেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, আরথ্রাইটিস ও ত্বকের সমস্যা বাড়াতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি হেলথ জার্নালের তথ্যমতে, গরুর শরীরের কিছু অংশে চর্বির পরিমাণ কম থাকে—যেমন: পেছনের রানের ‘রাউন্ড’ অংশ এবং ‘সেরলয়েন’। রান্নার আগে চর্বিযুক্ত অংশগুলো কেটে ফেললে কোলেস্টেরলের পরিমাণও অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তাছাড়া রান্নার পর ঠান্ডা করলে ওপরের চর্বির আস্তর সরিয়ে ফেলে ফ্যাট কমানো যেতে পারে।
গরুর মাংস খেতে অবশ্যই মানতে হবে পরিমিতি ও সচেতনতা। ঈদের আনন্দ ঠিক থাকুক, তবে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি যেন না বাড়ে। স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত হাঁটাচলা বা ব্যায়ামের মাধ্যমেই ঈদের সময়টুকু হোক আরও নিরাপদ ও আনন্দময়।