প্রোটিন গ্রহণ নিয়ে অনেকের মধ্যেই রয়েছে বিভ্রান্তি ও ভুল ধারণা। কেউ মনে করেন, শক্তিশালী হতে হলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া জরুরি। আবার কেউ মনে করেন, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রোটিন গ্রহণ করলে তা শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাহলে আসলে কতটুকু প্রোটিন আমাদের দরকার এবং অতিরিক্ত গ্রহণে শরীরে কী প্রভাব পড়ে—সেই বিষয়গুলো নিয়েই সম্প্রতি একটি ফিচার প্রকাশ করেছে বিবিসি।
দৈনিক কতটুকু প্রোটিন প্রয়োজন?
প্রোটিন মানবদেহের জন্য অপরিহার্য। এটি পেশি, এনজাইম, ত্বক, চুল ও রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরে প্রোটিন ভেঙে অ্যামিনো অ্যাসিডে পরিণত হয়, যা বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রতিকেজি ওজনের জন্য ০.৭৫ থেকে ০.৮ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। অর্থাৎ ৭০ কেজি ওজনের ব্যক্তির প্রতিদিন প্রায় ৫৬ গ্রাম প্রোটিন দরকার। তবে যারা বডি বিল্ডিং, অ্যাথলেটিক ট্রেনিং বা ওজন প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত, তাদের জন্য ১.৬ থেকে ২.২ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন প্রয়োজন হতে পারে।
প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রোটিন
বিশেষজ্ঞরা প্রাকৃতিক খাবার থেকেই প্রোটিন গ্রহণের পরামর্শ দেন। নিরামিষভোজীদের জন্য ডাল, বাদাম, সয়া, চিয়া সিড, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য ভালো উৎস। আমিষভোজীদের জন্য ডিম, মাছ, মুরগি ও গরুর মাংস অন্যতম ভালো উৎস।
প্রোটিন পাউডার: প্রয়োজন ও ঝুঁকি
সময়ের অভাব বা খাদ্য পরিকল্পনার ঘাটতির কারণে অনেকে পর্যাপ্ত প্রোটিন পান না। তখন প্রোটিন পাউডার হতে পারে একটি বিকল্প। তবে অনেক প্রোটিন পাউডারে থাকে ক্ষতিকর উপাদান, যেমন ভারী ধাতু, কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ ও বিষাক্ত রাসায়নিক। ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু প্রোটিন পাউডারে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে ২৫ গুণ বেশি ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে। তাই অবশ্যই ভালো মানের, নিরীক্ষিত প্রোটিন পাউডার বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
অতিরিক্ত প্রোটিনের ক্ষতিকর প্রভাব
অনেকে ভুলভাবে বিশ্বাস করেন, যত বেশি প্রোটিন গ্রহণ করবেন, তত দ্রুত পেশী গঠন হবে। বাস্তবে অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং হজমজনিত সমস্যা তৈরি করতে পারে, যেমন গ্যাস, পেট ফাঁপা ইত্যাদি। দিনে ২০-৪০ গ্রাম প্রোটিন পাউডারের বেশি না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এতে প্রাকৃতিক খাবারের ভিটামিন ও খনিজ গ্রহণ কমে যেতে পারে।
সুষম খাদ্যই মূল চাবিকাঠি
শুধু প্রোটিন নয়, অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। ভিটামিন, খনিজ ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড নিশ্চিত করতে খাদ্য তালিকায় মাছ, শাকসবজি, ফলমূল এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি রাখা জরুরি।
পেশী গঠন বা শক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন অবশ্যই দরকার, তবে অতিরিক্ত গ্রহণ নয়। সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম ও সঠিক ব্যায়ামই সুস্থ-শক্তিশালী শরীরের প্রকৃত চাবিকাঠি।