আত্মহত্যায় সহায়তার অভিযোগে ওপেনএআইয়ের চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি এবং কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক দম্পতি। তাদের দাবি, চ্যাটজিপিটি তাদের সন্তানের আত্মহত্যায় প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছে। এমনকি আত্মহত্যার পদ্ধতি জানানো থেকে শুরু করে চিরকুট লেখার ক্ষেত্রেও সে সহায়তা করেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্যালিফোর্নিয়ার ১৬ বছর বয়সী অ্যাডাম চ্যাটজিপিটির কাছ থেকে আত্মহত্যার উপায় জানতে পারে এবং নিজের আত্মহত্যার নোটের খসড়া তৈরিতে সাহায্যের প্রস্তাবও পায়। মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) ক্যালিফোর্নিয়ার সুপিরিয়র কোর্টে এ মামলা করা হয়।
মৃত্যুর প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই অ্যাডাম চ্যাটজিপিটি ব্যবহার শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যেই সে এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে যে চ্যাটজিপিটিকেই নিজের একমাত্র বন্ধু ভাবতে শুরু করে। এর ফলে পরিবারের সদস্য, বন্ধু কিংবা প্রিয়জনদের সঙ্গে তার সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যায়। মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এক পর্যায়ে অ্যাডাম চ্যাটজিপিটিকে জানায়, সে ফাঁসের দড়িটি রুমে রাখতে চায় যেন কেউ দেখে তাকে বাঁচাতে পারে। কিন্তু চ্যাটজিপিটি তাকে নিরুৎসাহিত করে এবং এ ধরনের চিন্তাভাবনা গোপন রাখার পরামর্শ দেয়।
শুধু অ্যাডামের পরিবারই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক পরিবার দাবি করছে তাদের সন্তানরাও এআই চ্যাটবটের কারণে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেউ কেউ আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছে। এরই মধ্যে ওপেনএআইসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলাগুলো এখনও চলমান। তবে ওপেনএআই জানিয়েছে, তারা ব্যবহারকারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে বদ্ধপরিকর এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য বিশেষ সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে এখন চ্যাটবট নিয়ে তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এআই প্রোগ্রামগুলো ব্যবহারকারীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করার মতোভাবে নকশা করা হয়েছে। এতে করে অনেক ব্যবহারকারী আবেগপ্রবণভাবে জড়িয়ে পড়ছেন, বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছেন এবং মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
উল্লেখ্য, গত বছর ফ্লোরিডার এক নারী মেগান গার্সিয়া ‘ক্যারেক্টার এআই’ নামের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। অভিযোগ ছিল, তার ১৪ বছরের ছেলে ওই চ্যাটবট ব্যবহার করে আত্মহত্যা করেছে। একইভাবে আরও দুটি পরিবার অভিযোগ এনে মামলা করে। তারা জানিয়েছিল, এআই চ্যাটবট তাদের সন্তানদের যৌন কন্টেন্ট ও আত্মক্ষতির মতো ক্ষতিকর বিষয় দেখিয়েছে।
সম্প্রতি ওপেনএআই তাদের নতুন মডেল জিপিটি-৫ চালু করেছে, যা পূর্বের সংস্করণের জায়গা নিয়েছে। যদিও অ্যাডাম আগের মডেলের সঙ্গে কথোপকথন করেছিল, নতুন মডেল নিয়েও কিছু ব্যবহারকারী ভুল তথ্য প্রদান ও যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের অভাবের অভিযোগ তুলেছেন। গত বছরের আগস্টেই ওপেনএআই সতর্ক করেছিল, ব্যবহারকারীরা চ্যাটজিপিটির সঙ্গে অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারেন, যা মানবিক সম্পর্ক দুর্বল করার ঝুঁকি তৈরি করবে।