ক্যানসারে আক্রান্ত এক রোগীর জীবন বাঁচাতে প্রয়োজন ছিল জটিল অস্ত্রোপচার। কিন্তু স্থানীয়ভাবে সেই সুযোগ না থাকায় নির্ভর করতে হলো আধুনিক প্রযুক্তির ওপর। বিস্ময়কর হলেও সত্য— প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার দূরে বসে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার চিকিৎসক ডা. বিপুল প্যাটেল সফলভাবে শেষ করলেন দেড় ঘণ্টার সেই অস্ত্রোপচার। ঘটনাটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
রোগী ছিলেন আফ্রিকার অ্যাঙ্গোলার একটি হাসপাতালে। ডা. বিপুল সরাসরি উপস্থিত না থাকলেও রোবটের সাহায্যে তিনি অপারেশনটি সম্পন্ন করেন। এই অভিনব প্রক্রিয়াটির নাম দেওয়া হয়েছে ট্রান্সকন্টিনেন্টাল রোবটিক টেলিসার্জারি। এ ধরনের অপারেশনে সার্জন কনসোলের সামনে বসে হাতল নাড়েন, আর সেই সংকেত মুহূর্তেই সমুদ্রতলের ফাইবার-অপটিক কেবলের মাধ্যমে পৌঁছে যায় হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা রোবটের কাছে। রোবটের সূক্ষ্ম যান্ত্রিক হাতও তেমনি নড়ে, এবং নিখুঁতভাবে অপারেশন চালিয়ে যায়।
অস্ত্রোপচারের সময় ডা. বিপুল একটি থ্রিডি স্ক্রিনে রোগীর শরীর পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁর মতে, এত দীর্ঘ দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও হাতের নড়াচড়া ও রোবটের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে কোনো বিলম্ব হয়নি। মাত্র এক ঘণ্টা বিশ মিনিটেই সফলভাবে শেষ হয় এই জটিল প্রক্রিয়া।
ডা. বিপুল এর আগে প্রায় ২০ হাজার রোবটিক সার্জারি করেছেন, তবে সেগুলোতে তিনি রোগীর সঙ্গে একই কক্ষে ছিলেন। এবারই প্রথম তিনি মহাদেশ পেরিয়ে দূর থেকে সফলভাবে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করলেন।
রোবট দিয়ে সার্জারির ইতিহাস খুব বেশি পুরোনো নয়। ১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ‘পুমা ৫৬০’ রোবট ব্যবহার করে প্রথম মস্তিষ্কের টিউমার অপসারণ করা হয়। ২০০০ সালে এফডিএ অনুমোদন দেয় বিখ্যাত সার্জিকাল রোবট ‘দা ভিঞ্চি’-কে। আর ২০০১ সালে প্রথম বড় সাফল্য আসে, যখন নিউইয়র্কে থাকা এক সার্জন ফ্রান্সের এক রোগীর পিত্তথলি অপসারণ করেছিলেন।
তবে ফ্লোরিডা থেকে অ্যাঙ্গোলার এই ১১ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে সম্পন্ন হওয়া সার্জারি চিকিৎসা প্রযুক্তিকে এক নতুন স্তরে নিয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সাফল্য ভবিষ্যতের চিকিৎসা আরও সহজলভ্য, দ্রুত ও বৈশ্বিক করে তুলবে।