বিশ্বে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পৃথিবীতে ১০০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ৮৮ হাজার। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে ১০ লাখে পৌঁছাবে। অথচ ১৯৯০ সালে শতবর্ষীদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৯২ হাজার।
এই প্রবণতার পেছনে রয়েছে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা, পুষ্টিকর খাদ্য এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন। জাতিসংঘ ১৯৬২ সাল থেকে মানুষের গড় আয়ু পরিমাপ করছে। সে সময় গড় আয়ু ছিল ৫২ বছর, যা বর্তমানে বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে তা ৭৭ বছর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বে এখন ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের চেয়েও বেশি। ২০২৩ সালে জাতিসংঘ জানায়, মোট জনসংখ্যার ০.০০৭ শতাংশ মানুষের বয়স ১০০ বছরের ওপরে।
তবে শতবর্ষী হওয়া এখনো বিরল ঘটনা, বিশেষ করে ‘সুপার-সেনটেনেরিয়ান’ অর্থাৎ ১১০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে। যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে প্রতি ৫০ লাখ মানুষের মধ্যে একজন এমন বয়স পর্যন্ত পৌঁছায়।
স্বাভাবিকভাবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ে। ব্রিটেনের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষ জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক জ্যানেট লর্ড বলেন, ‘দীর্ঘজীবন আর ভালোভাবে বেঁচে থাকা এক নয়।’ তার মতে, পুরুষেরা গড়ে জীবনের শেষ ১৬ বছর এবং নারীরা শেষ ১৯ বছর ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া বা অন্যান্য জটিলতায় ভোগেন।
তবুও কিছু শতবর্ষী মানুষ জটিল রোগ ছাড়াই দীর্ঘজীবী হয়ে থাকেন। ফ্রান্সের জ্যাঁ কেলমো ১২২ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন, যিনি এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী মানুষের স্বীকৃতি ধরে রেখেছেন। তিনি ছিলেন ধূমপায়ী ও চকলেটপ্রেমী, যা প্রচলিত স্বাস্থ্য পরামর্শের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
২০১১ সালে এক গবেষণায় দেখা যায়, ৯৫ বছর বা তার বেশি বয়সী অনেক মার্কিন ইহুদি অতিধূমপায়ী, স্থূলতায় আক্রান্ত এবং অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের অধিকারী ছিলেন, তবুও তারা দীর্ঘজীবী হয়েছেন।
গবেষকরা মনে করেন, দীর্ঘজীবনের পেছনে জিনগত প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু মানুষ হয়তো এমন জিন বহন করেন, যা তাদের শরীরকে রোগপ্রতিরোধে সহায়ক করে এবং নানা বদভ্যাসের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষকরা বলছেন, এই শতাব্দীতেই হয়তো অনেক মানুষ ১২৫ কিংবা ১৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারবেন। তবে দীর্ঘজীবনের চেয়েও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে জীবনযাত্রার মান। লন্ডনের কিংস কলেজের গবেষক ড. রিচার্ড সিয়ো বলেন, “আয়ু নিয়ে আলোচনা নয়, বরং কীভাবে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকা যায় সেটাই বড় প্রশ্ন।”
দীর্ঘজীবনকে যেন শুধু সংখ্যায় সীমাবদ্ধ না রেখে, তা যেন হয় আনন্দময় ও স্বাস্থ্যসম্মত—এই লক্ষ্যেই বিজ্ঞানীরা এখন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।