ক্যানসার একটি ভয়ংকর রোগ, যা বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের মৃত্যুর কারণ। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের তুলনায় পুরুষদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ও মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি। ভারতের খ্যাতনামা অনকোলজিস্ট ডা. হরিশ বর্মা জানিয়েছেন, বেশ কিছু কারণে পুরুষরা বেশি ঝুঁকির মুখে থাকেন।
প্রথমত, পুরুষরা সাধারণত চিকিৎসকের কাছে যান না, যতক্ষণ না সমস্যাটা গুরুতর হয়ে ওঠে। জরিপে দেখা গেছে, ৪৪ শতাংশ পুরুষ শুধু ‘অত্যন্ত প্রয়োজন হলে’ ডাক্তার দেখান। দ্বিতীয়ত, ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ যেমন— হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, শরীরে গুটি বা ফোলা, মল বা প্রস্রাবে পরিবর্তন, দীর্ঘদিনের ক্লান্তি— এগুলোকে তারা প্রায়ই উপেক্ষা করেন।
এছাড়া, ‘আমি ঠিক আছি’ বা ‘এটা তেমন কিছু নয়’— এমন মানসিকতা অনেক সময় জীবন-মরণ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অস্বাস্থ্যকর জীবনধারাও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া, রাতজাগা এবং ব্যায়ামের অভাব— এগুলো ফুসফুস, লিভার, কোলন ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাছাড়া ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ থাকলেও ক্যানসার হতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ পুরুষ শুধু গুরুতর উপসর্গ দেখা দিলে টেস্ট করান।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে ডা. হরিশ বর্মা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমত, নিজের শরীরের অস্বাভাবিকতা গুরুত্ব দিন এবং উপেক্ষা করবেন না। দ্বিতীয়ত, বছরে অন্তত একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও রক্ত-হরমোন চেকআপ করুন। তৃতীয়ত, ধূমপান, মদ্যপান ও প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করুন। চতুর্থত, সুষম খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত ব্যায়াম অভ্যাসে আনুন। সর্বশেষ, স্বাস্থ্য নিয়ে পরিবার, বন্ধু বা চিকিৎসকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন।
মনে রাখতে হবে, ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসায় সফলতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই “পুরুষ মানেই সবল” এই ভুল ধারণা ভাঙতে হবে। প্রকৃত সবলতা হলো অসুস্থতাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া। নিজের শরীরকে অবহেলা না করে আজ থেকেই সচেতন হোন, নিয়মিত চেকআপ করুন, নিজেকে ভালোবাসুন।