স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা আগে প্রতি বছর তিন দফা এডিস মশা–সংক্রান্ত জরিপ চালালেও বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেগুলো আর হয়নি। গত এক বছরে কেবল একটি জরিপ করেছে আইইডিসিআর, তাও প্রাক-মৌসুমে—কিন্তু ফলাফলের প্রকাশ বিলম্বিত হওয়ায় সংশ্লিষ্টরা সময়মতো সতর্ক হতে পারেননি। ওই জরিপে ঢাকা মহানগরীর ১৩টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার বিপজ্জনক উপস্থিতি ধরা পড়ে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত জরিপ ও বিশ্লেষণ থাকলে রোগ বিস্তার বুঝে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হতো। অধ্যাপক ডা. বে‑নজির আহমেদের মতে, মৌসুমের আগে, মৌসুম চলাকালীন ও মৌসুম-পরবর্তী তিন ধরনের জরিপের ধারাবাহিক ফল থেকে রোগতাত্ত্বিক প্যাটার্ন বের করা সম্ভব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অপারেশনাল প্ল্যান (ওপি) বন্ধ রাখা ডেঙ্গুসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জরিপের মূল ফলাফল
ঢাকা উত্তর সিটি (ডিএনসিসি):
৬টি ওয়ার্ড উচ্চ ঝুঁকিতে (ব্রুটো ইনডেক্স > ২০)
৭টি ওয়ার্ড মধ্যম ঝুঁকিতে (ব্রুটো ইনডেক্স > ১০)
১৯টি ওয়ার্ড নিম্ন ঝুঁকিতে, ৮টি ওয়ার্ডে লার্ভা নেই
ঢাকা দক্ষিণ সিটি (ডিএসসিসি):
৭টি ওয়ার্ড উচ্চ ঝুঁকিতে
১৮টি ওয়ার্ড মধ্যম ঝুঁকিতে
১৯টি ওয়ার্ড নিম্ন ঝুঁকিতে, ১৫টি ওয়ার্ডে লার্ভা নেই
লাভা‑ধারক জায়গা অনুযায়ী তুলনা করলে সবচেয়ে বিপজ্জনক বাহন বহুতল ভবন (৫৮.৯%), এরপর নির্মাণাধীন ভবন (১৯.৬%), একক বাড়ি (৯.৮%), সেমিপাকা বাড়ি (৮.৯%) ও ফাঁকা স্থান (২.৮%)।
পরিসংখ্যান ও চলতি অবস্থা
গত ১০ বছরের ডেটা বলছে, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা রেকর্ড ছুঁয়েছিল। ২০২3 সালে আক্রান্ত ৩ লক্ষাধিক, মৃত্যু ১ ৭০৫ জন; ২০২4‑এ আক্রান্ত ১ লাখের বেশি, মৃত্যু ৫৭৫ জন। চলতি বছরের (১ জানুয়ারি–১৭ জুন ২০২5) আক্রান্ত ৬ ৪৬৬, মৃত্যু ৩০। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি ২৪৪ জন, এর মধ্যে বরিশালেই ১৩৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে; তবে সচেতনতা ও সমন্বিত কার্যক্রম ছাড়া সফলতা সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—জেলা পর্যায়ে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে, জরুরি ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।