ঢাকা, একসময় মোগল সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রদেশ ছিল। বিশেষ করে ১৭শ ও ১৮শ শতকে, মোগল শাসনের অধীনে এই শহর বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও উৎসবের এক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ঈদ উৎসবও ছিল অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষ একে উদযাপন করত।
ঈদের প্রস্তুতি ও বাজার
মোগল আমলে ঢাকায় ঈদের আগে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হতো। নগরীর বড় বাজারগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে কেনাকাটার ধুম পড়ত। সেই সময় ঢাকার চকবাজার, ইসপাহানি বাজার, এবং বাখরাবাজার ছিল কেনাকাটার প্রধান কেন্দ্র। শেরবাট, মিঠাই, আতর, রেশমি কাপড়, ওড়না এবং বাহারি অলংকারের দোকানে উপচে পড়া ভিড় দেখা যেত।
ঈদের নামাজ ও আনুষ্ঠানিকতা
ঈদের প্রধান আকর্ষণ ছিল ঈদগাহের জামাত। সেই সময় ঢাকার প্রধান ঈদগাহ ছিল বর্তমানে হোসেনী দালান সংলগ্ন এলাকা এবং বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত বড় কাটরা সংলগ্ন ময়দান। এছাড়াও বিভিন্ন মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হতো। মোগল আমলে ঈদের দিন সুবাদার বা শাসক নিজে নামাজে অংশ নিতেন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতেন।
আমোদ-প্রমোদ ও বিনোদন
ঈদের পর বিনোদনের জন্য বিভিন্ন আয়োজন করা হতো। নৌকা বাইচ, ঘোড়দৌড়, কবিগান, ও পুতুলনাচের মতো ঐতিহ্যবাহী বিনোদন ব্যবস্থা ছিল। এছাড়া নবাবদের বা মোগল আমলাদের বাড়িতে বিশেষ মজলিস বসত, যেখানে গজল, কাওয়ালি এবং শাস্ত্রীয় সংগীতের আসর বসত।
খাবার ও মিষ্টান্ন
ঈদ মানেই বিশেষ খাবার-দাবারের আয়োজন। মোগল আমলে ঢাকায় ঈদের দিন বিশেষভাবে বিরিয়ানি, শিরখুরমা, ফিরনি, রোস্ট, শামি কাবাব, কাচ্চি বিরিয়ানি এবং মুগলাই পরোটা পরিবেশন করা হতো। ঢাকার নবাব পরিবার ও অভিজাত শ্রেণির বাড়িতে এই উৎসব বিশেষ জাঁকজমকপূর্ণ হতো।
সমাজের সর্বস্তরের অংশগ্রহণ
ঈদ শুধুমাত্র উচ্চবিত্তদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না। দরিদ্র ও সাধারণ জনগণের মধ্যেও ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া হতো। মোগল শাসকরা দরিদ্রদের জন্য খাদ্য ও পোশাক বিতরণ করতেন, যা এক প্রকার সমাজসেবার অংশ ছিল।
ঈদের সময় নিরাপত্তা ও প্রশাসনের ভূমিকা
মোগল শাসনকালে ঈদের সময় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হতো। নগরীর আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করা হতো। এছাড়াও, ঈদের আনন্দ যাতে সব শ্রেণির মানুষ উপভোগ করতে পারে, সে জন্য সুবাদারগণ বিশেষ নির্দেশনা দিতেন।