নওগাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ‘ওহিদুর বাহিনীর’ অধিনায়ক ওহিদুর রহমান আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল ১০টায় তিনি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন ওহিদুর বাহিনীর সাবেক মুক্তিযোদ্ধা হাসানুজ্জামান ভুলু।
ওহিদুর রহমান ছিলেন একজন সংগঠক এবং মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখা এক সাহসী যোদ্ধা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নওগাঁ, রাজশাহী ও নাটোর জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গঠিত হয়েছিল এক বিশাল গেরিলা বাহিনী, যা পরবর্তীতে ‘ওহিদুর বাহিনী’ নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রায় দুই হাজার মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে গঠিত এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কৃষক নেতা ওহিদুর রহমান। চার জেলার ১৪টি থানাজুড়ে এই বাহিনীর কার্যক্রম বিস্তৃত ছিল। আত্রাই, ছোট যমুনা, ফক্কিনী, খাজুরা, নাগরসহ ৬টি নদী এবং ১৩টি বিলজুড়ে ছিল তাদের চলাচলের পথ। বাহিনীটি জলপথেই চলাচল করত, আর স্থানীয়রা তাদের নৌকার বহরকে ‘ওহিদুরের বায়ান্ন ডিঙ্গি’ বলে ডাকত।
১৯৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, সাহসী এই বাহিনী আত্রাইয়ের সাহাগোলা ব্রিজ উড়িয়ে দেয়, যার ফলে ১০৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। অথচ এই সময় পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ভারতের নকশাল নেতা চারু মজুমদারের রাজনৈতিক পথ অনুসরণ করে মুক্তিযুদ্ধ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ওহিদুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং নিজেই গঠন করেন প্রতিরোধ বাহিনী।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি রাণীনগর-আত্রাই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ওহিদুর রহমান ১৯৪৩ সালে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। কলেজজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনীতিতে তার পদচারণা শুরু হয়। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
তাঁর জানাজা আজ বাদ এশা নওগাঁ নওজোয়ান মাঠে এবং আগামীকাল রবিবার সকাল ১০টায় নিজ গ্রাম আত্রাই উপজেলার রসুলপুরে অনুষ্ঠিত হবে।