সংযুক্ত আরব আমিরাত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশিদের জন্য দুবাই ভ্রমণ ও কাজের ভিসা কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া এই স্থগিতাদেশের এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সমাধান আসেনি। ফলে লাখ লাখ ভিসাপ্রত্যাশী বাংলাদেশির জন্য তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা ও হতাশা। সম্প্রতি কিছু গণমাধ্যমে নতুন করে বাংলাদেশসহ ৯ দেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবর প্রকাশ পেলেও এ বিষয়ে আমিরাত সরকারের ওয়েবসাইটে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ঢাকাস্থ আমিরাত দূতাবাস থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো নিশ্চয়তা পায়নি।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই স্থগিতাদেশের কারণে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও পারিবারিক ভ্রমণের পরিকল্পনা থমকে গেছে অনেকের। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্টস সামিটে অংশ নিয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমিরাত কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। কিন্তু নিয়মিত যোগাযোগ সত্ত্বেও দুবাই এখনো নতুন কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধের পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। ভুয়া নথি ব্যবহার ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে অনেক বাংলাদেশিকে দেশটি থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আবার গত বছরের জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক আন্দোলনের সময় শতাধিক বাংলাদেশি প্রবাসী বিক্ষোভ করায় বেশ কয়েকজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান তাদের শাস্তি মওকুফ করে ফেরত পাঠান। এর কিছুদিন পরই বাংলাদেশিদের ভিসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
আমিরাতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভুয়া শিক্ষাগত নথি ব্যবহার বাংলাদেশিদের মধ্যে বেশি। অনেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নকল সার্টিফিকেট দেখিয়ে সাধারণ কাজের ভিসায় দেশটিতে যান। এতে প্রকৃত ফাইলও অনেক সময় বাতিল হয়ে যায় এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ভিসা স্থগিতাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয়ও জড়িত। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ বিষয়ে সমাধান না হওয়ায় ভিসা কার্যক্রমেও প্রভাব পড়ছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, শিগগিরই বাংলাদেশিদের জন্য দুবাই ভিসা সহজে চালু হচ্ছে না। ধাপে ধাপে ভিসা কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানালেও নির্দিষ্ট সময়সীমা এখনো অনিশ্চিত।