সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথরে ফের প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে এলাকা, স্বস্তি ফিরেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝেও। তবে এখন আর সাদাপাথরের বুকে শাবল বা খুন্তি চালানোর দৃশ্য নেই; বরং পুরোদমে চলছে ক্ষতস্থানে পাথর প্রতিস্থাপন। একইভাবে বিছনাকান্দি, জাফলং, উৎমাছড়া ও রাংপানিতেও লুট হওয়া পাথর ফের প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
পর্যটকদের অনেকেই জানিয়েছেন, সাদাপাথর আগের মতো সৌন্দর্য হারিয়েছে। যদিও প্রতিস্থাপন চলছে, তবে পুরনো রূপ ফিরে পেতে সময় লাগবে। জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমের আলটিমেটামের পর এখন পর্যন্ত ২৫ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) শেষ হচ্ছে পাথর ফেরত দেওয়ার আলটিমেটাম। এর পর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে চিরুনি অভিযান, যেখানে মজুত পাথর পাওয়া গেলে দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে অনেকেই ইতোমধ্যে পাথর ফিরিয়ে দিয়েছেন। শনিবার (২৩ আগস্ট) থেকে এ বিষয়ে মাইকিংও করা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সদর উপজেলা থেকে ২৫১টি ও কোম্পানীগঞ্জ থেকে ১০৯টি ট্রাকে করে উদ্ধারকৃত পাথর পাঠানো হয়েছে সাদাপাথরে। এছাড়া শারফিন টিলায় প্রায় ৩০–৪০ হাজার ঘনফুট পাথর প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিন মিয়া জানিয়েছেন, নির্দেশনার পর থেকে ২৫ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার হয়েছে এবং এর মধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ ঘনফুট প্রতিস্থাপনও করা হয়েছে। প্রতিস্থাপনের কাজ দ্রুত শেষ করতে পেলোডার মেশিন ও স্টিলবডির ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনুর রুবাইয়াৎ জানিয়েছেন, ধোপাগুল ও লালবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৫০টি ট্রাকে এসব পাথর প্রতিস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীও নিজ উদ্যোগে পাথর পাঠিয়েছেন। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন অধিকারী জানান, জাফলংয়ে ইতোমধ্যে ২৫ হাজার ঘনফুট পাথর প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং আরও ৭ হাজার ঘনফুট মজুত রাখা আছে।
জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেছেন, “আলটিমেটামের পর অনেকেই স্বেচ্ছায় পাথর ফিরিয়ে দিয়েছেন। আশাকরি ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। এরপরও কেউ না ফিরালে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, সোমবার পর্যন্ত আড়াই লাখ পাথর প্রতিস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং ধাপে ধাপে সব পাথর প্রতিস্থাপন করে সাদাপাথরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১০ ও ১১ আগস্ট ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে সংঘবদ্ধভাবে পাথর লুটের ঘটনা দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। এরপর থেকেই প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়ে উদ্ধার ও প্রতিস্থাপন অভিযানে নেমেছে।