ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে এখন ছবি না তোলা যেন অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে! রেস্তোরাঁয় খাওয়া, সিনেমা দেখা, কিংবা একসঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাওয়া—সব মুহূর্তই এখন ধরা পড়ে মোবাইল ক্যামেরায়। তারপর সেই ছবিগুলো সরাসরি শেয়ার হয় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা এক্সে। লাইক, কমেন্ট আর হার্ট রিঅ্যাকশন—সব মিলিয়ে যেন সম্পর্কের সুখের মাপকাঠিই হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া।
তবে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণাকারী বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকাশ্যে এমন সুখের প্রদর্শন সবসময় প্রকৃত সুখের প্রতিফলন নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রেই যারা সম্পর্কে অনিশ্চিত বা মানসিকভাবে অখুশি, তারাই বেশি ছবি পোস্ট করে নিজেদের ‘সুখী’ প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। একটি জনপ্রিয় ডেটিং অ্যাপের প্রধান নির্বাহী রবি মিত্তল জানান, বর্তমানে ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৮ জন তাদের ব্যক্তিগত মুহূর্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন। কিন্তু গবেষণা বলছে, সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী ও সুস্থ রাখতে চাইলে সবকিছু প্রকাশ্যে না আনাই শ্রেয়।
মনোবিদদের বিশ্লেষণও প্রায় একই রকম। তাদের মতে, সত্যিকারের সুখী দম্পতিরা একসঙ্গে কাটানো সময়টাতে এতটাই নিমগ্ন থাকেন যে ছবি তোলা বা পোস্ট করার চিন্তাই তাদের মাথায় আসে না। বরং যারা নিজের সুখ প্রমাণ করতে চান, তারাই নিয়মিত ছবি পোস্টের মাধ্যমে সেই ‘সুখের গল্প’ দেখাতে চেষ্টা করেন।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করার পর ‘কত লাইক পেলাম’ বা ‘কে কমেন্ট করল’—এসব ভাবনা থেকেই তৈরি হয় মানসিক চাপ। অনেক সময় সঙ্গীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভুল বোঝাবুঝিও হয়, যা সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন বা দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
১. ছবি শেয়ার করা বা না করা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, তবে তা যেন সম্পর্কের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব না ফেলে।
২. উৎসব বা আনন্দময় মুহূর্তে ছবি শেয়ার করা যেতে পারে, কিন্তু শুধুমাত্র নিজের সুখ প্রমাণের জন্য নয়।
৩. সঙ্গীর সম্মতি ছাড়া কোনো ছবি বা ভিডিও পোস্ট করবেন না।
৪. এমন কোনো কনটেন্ট শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন যা শালীনতার সীমা অতিক্রম করে।
৫. মাঝে মাঝে ক্যামেরা সরিয়ে রেখে বাস্তব মুহূর্ত উপভোগ করুন—সেই সময়টুকুই সম্পর্কের আসল সম্পদ।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, সম্পর্কের সৌন্দর্য প্রকাশ্যে নয়, অন্তরঙ্গতায়। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় আদুরে ছবি না থাকলেও সম্পর্ক দুর্বল হয় না; বরং পারস্পরিক বোঝাপড়া, শ্রদ্ধা ও মানসিক সংযোগই আসল সুখের প্রতিচ্ছবি।