রাতে ঘুমানোর আগে অনেকেরই মোবাইল ফোন ব্যবহার করার অভ্যাস রয়েছে। কেউ ফোন হাতে নিয়ে ঘুমান, কেউ বা ফোনটি রাখেন বালিশের নিচে বা পাশে। ফোনে কল, মেসেজ বা ইমেইল এলেই সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেওয়ার প্রবণতা এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তির এই ‘সর্বদা কানেক্টেড’ সুবিধা আমাদের জীবনে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে—বিশেষত ঘুম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর।
ঘুম-বিশেষজ্ঞ ড. মিশেল ড্রেরাপ জানিয়েছেন, ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্মার্টফোন ব্যবহার ঘুমের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। শুয়ে শুয়ে একটু স্ক্রল করাকে অনেকেই ক্ষতিকর মনে না করলেও এটি আসলে ঘুমের বড় শত্রুতে পরিণত হতে পারে। বিশেষ করে ‘ডুমস্ক্রোলিং’—যেখানে একের পর এক নেতিবাচক খবর বা পোস্ট দেখা হয়—মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে তোলে। এতে ঘুম বিলম্বিত হয় এবং রেম (REM) ঘুমে প্রবেশ করতেও দেরি হয়।
ফোনে কী দেখা হচ্ছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি শুধু হালকা সঙ্গীত শোনে বা গঠনমূলক কিছু পড়ে, তাহলে সমস্যা তুলনামূলক কম। কিন্তু সক্রিয়ভাবে চ্যাটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, বা উত্তেজনাকর কনটেন্ট দেখা ঘুমে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটায়।
স্মার্টফোনের স্ক্রিন থেকে বের হওয়া নীল আলো (blue light) আমাদের ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন কমিয়ে দেয়। এটি আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদম বিঘ্নিত করে। ফলে ঘুম কমে যায়, ক্লান্তি বাড়ে এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠে।
এছাড়া ফোনের মাধ্যমে দেখা কনটেন্ট যদি আবেগপ্রবণ হয়—যেমন মন খারাপ করা, রাগানো, বা অতিরিক্ত আনন্দদায়ক—তাহলেও মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং ঘুম আসতে দেরি হয়। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, ঘুমাতে যাওয়ার এক থেকে দুই ঘণ্টা আগে ফোনসহ সব ধরনের স্ক্রিন বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
ঘুমের আগে ফোনের পরিবর্তে মেডিটেশন, ধ্যান, হালকা বই পড়া, ধীর গতির মিউজিক শোনা বা হালকা যোগব্যায়াম করা যেতে পারে। কেউ চাইলে ফোনে ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ বা ‘নাইট মোড’ চালু করে রাখতে পারেন বা ফোনটি অন্য ঘরে রেখে ঘুমাতে পারেন।
ফোন ঘাঁটার এই অভ্যাস এক ধরনের ডিজিটাল আসক্তি। কিন্তু ধীরে ধীরে এই অভ্যাস বদলানো গেলে ঘুমের মান অনেকটাই উন্নত হয়। শুধু চোখ বা মস্তিষ্ক নয়—সম্পূর্ণ শরীরের সুস্থতার জন্য ঘুমের আগে মোবাইল ব্যবহার কমানো অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখতে হবে, আপনার ঘুম আপনার ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই একটু সচেতন হলেই ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্য অনেক ভালো রাখা সম্ভব।
তথ্যসূত্র: ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক