১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল তারিখটি মানব ইতিহাসে এক অনন্য স্থান অধিকার করে আছে। এই দিনে সোভিয়েত ইউনিয়নের এক সাহসী ও তরুণ বৈমানিক, **ইউরি আলেক্সেইয়েভিচ গ্যাগারিন**, প্রথম মানব হিসেবে মহাকাশে যাত্রা করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তাঁর মহাকাশযান “ভোস্তক ১” পৃথিবীকে একবার সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করে। এই যাত্রা মোট ১০৮ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল এবং মানবজাতির জন্য একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
গ্যাগারিনের এই মহাকাশযাত্রা ছিল শুধুমাত্র একক সাহসিকতার কাজ নয়; এটি ছিল প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং সোভিয়েত মহাকাশ কর্মসূচির একটি গৌরবময় ফল। সোভিয়েত ইউনিয়নের এই সাফল্য বিশ্বজুড়ে বিস্ময় এবং শ্রদ্ধা জাগিয়েছিল। তখনকার সময়ে এটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার চলমান মহাকাশ প্রতিযোগিতায় একটি বড় বিজয়।
ভোস্তক ১ মহাকাশযানটি কাজাখস্তানের বাইকোনুর কসমোড্রোম থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। উৎক্ষেপণের সময় গ্যাগারিন বলেছিলেন, “Поехали!” যার বাংলা অর্থ—“চলো যাই!” মহাকাশে পা রাখার পর, তাঁর মুখে ছিল চিরস্মরণীয় হাসি। তিনি পৃথিবীকে এক অসাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছিলেন এবং এটি ছিল এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি যা আগে কোনো মানুষ কল্পনাও করতে পারেনি।
এই ঐতিহাসিক ঘটনার পর, গোটা সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং বিশ্বের নানা প্রান্তে ইউরি গ্যাগারিনকে জাতীয় বীর হিসেবে বরণ করে নেওয়া হয়। বিশেষ করে মস্কোর রেড স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হয় এক বিশাল সমাবেশ, যেখানে হাজার হাজার মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হয়েছিল। তাঁকে ভূষিত করা হয়েছিল নানা উপাধি ও পুরস্কারে।
গ্যাগারিনের এই মিশন শুধু একটি প্রতিযোগিতার ফল ছিল না, বরং এটি মানুষের মহাকাশ অন্বেষণের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এই যাত্রার পর বিশ্বজুড়ে মহাকাশ গবেষণায় নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয় এবং পরবর্তী সময়ে চাঁদে যাত্রা, মহাকাশ স্টেশন নির্মাণ, এবং অন্যান্য গ্রহে অভিযান—সবকিছুর ভিত্তি স্থাপিত হয় এই একক যাত্রার মাধ্যমে।
আজকের দিনে যখন আমরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা মঙ্গলগ্রহে অভিযান নিয়ে কথা বলি, তখন মনে রাখা উচিত, সেই পথচলা শুরু হয়েছিল ইউরি গ্যাগারিনের সেই সাহসী পদক্ষেপ দিয়ে। ১২ এপ্রিল আজও বিশ্বজুড়ে “ইয়ুরি’স নাইট” হিসেবে পালন করা হয়, যা মানবজাতির মহাকাশ অভিযাত্রার সম্মানসূচক দিন।