রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় গবাদি পশু থেকে মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এক অজানা রোগ। আক্রান্তদের প্রথমে হাতে ফুসকুড়ি দেখা দেয়, যা পরে ঘায়ে পরিণত হয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করছে। গত এক মাসে এ উপজেলায় অন্তত ৩ শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়েছেন। তবে শুরুতে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, রোগটির উপসর্গ অ্যানথ্রাক্সের সঙ্গে অনেকটা মিলে যায়। ইতোমধ্যে পীরগাছা সদর, তাম্বুলপুর, ছাওলা, পারুল ও ইটাকুমারী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পীরগাছা সদর, ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
অনন্তরাম বড় বাড়ির সাবিনা আক্তার জানান, অসুস্থ গরুর সেবা করতে গিয়ে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। দুলাল মিয়া বলেন, অসুস্থ ছাগল জবাই করার পর তার হাতে ফুসকুড়ি হয় যা পরে বড় ক্ষতে রূপ নেয়। একইভাবে আবুল কাশেম নামের এক রোগী জানান, তিনি দেড় মাস ধরে চিকিৎসাধীন এবং স্থানীয় চিকিৎসকরা বলেছেন এটি সম্ভবত অ্যানথ্রাক্স। তাম্বুলপুরের জয়নাল মিয়ার অভিজ্ঞতাও একই—অসুস্থ গরু জবাই করার পর সেই মাংস স্পর্শে তার পরিবারের কয়েকজনের হাতে ঘা হয়েছে।
আক্রান্তদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, রোগের উপসর্গ সবার প্রায় একই রকম। প্রথমে চুলকানি হয়, পরে ফুসকুড়ি, এরপর ঘা ও কালো ক্ষত তৈরি হয়। ক্ষতের ভেতরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া হয় এবং মাংস পচে গর্তের সৃষ্টি করে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আঁখি সরকার জানান, প্রতিদিনই ৫ থেকে ৭ জন রোগী এমন উপসর্গ নিয়ে আসছেন। একই পরিবারের একাধিক সদস্যও আক্রান্ত হচ্ছেন। তার মতে, উপসর্গগুলো অ্যানথ্রাক্সের সঙ্গে মিলে যায়।
এদিকে গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ দল আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলে রোগ শনাক্তে কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ দপ্তর মাঠ পর্যায়ে গবাদি পশুকে ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।