স্রষ্টার বৈচিত্র্যময় সৃষ্টির সমাহারে পৃথিবী রঙিন ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। এসব সৃষ্টির মধ্যে অনিন্দ্যসুন্দর সৃষ্টি হলো রংবাহারি প্রজাপতি। কোমল ডানার বর্ণিল সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও প্রজাপতির সৌন্দর্যে প্রভাবিত হয়ে লিখেছিলেন— “প্রজাপতি! প্রজাপতি!/ কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা,/ টুকটুকে লাল-নীল ঝিলিমিলি আঁকা-বাঁকা।” প্রজাপতি শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা ও উদ্ভিদ-ফসলের পরাগায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, বন উজাড়, গাছপালা নিধন, পানি দূষণ এবং পরিবেশ ধ্বংসের ফলে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রজাপতির সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এতে প্রজাপতির প্রজাতি অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে, যার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে এবং বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রজাপতি লেপিডোপ্টেরা বর্গের অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীতে প্রায় ১৮ হাজার প্রজাতি প্রজাপতি রয়েছে, যার মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ১,৫০০ এবং বাংলাদেশে প্রায় ৪২০ প্রজাতি দেখা যায়। আইইউসিএন বাংলাদেশের লাল তালিকা অনুযায়ী, দেশে ৩০৫ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে, তবে এর অনেকগুলো প্রজাতি বর্তমানে বিপন্ন অবস্থায় আছে।
প্রজাপতির জীবনচক্র ডিম থেকে শুরু হয়ে শুঁয়োপোকা ও তারপর পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হয়। এরা ফুলের মধু, খনিজ পদার্থ ও শর্করা গ্রহণ করে এবং স্যাঁতসেঁতে জায়গা থেকে পানি পান করে। খাদ্যশৃঙ্খলে প্রজাপতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শুঁয়োপোকা পাখি, ব্যাঙ ও টিকটিকির খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। এছাড়া পরাগায়নের মাধ্যমে উদ্ভিদের বংশবিস্তারেও তারা ভূমিকা রাখে।
শিক্ষক মো. আমির হোসেন বলেন, প্রজাপতির সংখ্যা হ্রাস পেলে খাদ্যশৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বাস্তুতন্ত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রজাপতির সংখ্যা ও বৈচিত্র্য কোনো অঞ্চলের পরিবেশগত স্বাস্থ্যের সূচক। তাই প্রজাপতির টিকে থাকার জন্য কীটনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং বনাঞ্চল সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, প্রজাপতি প্রকৃতির বন্ধু এবং পরিবেশের অলংকার। এরা শুধু ফুল-পাতার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, বরং উদ্ভিদের পরাগায়নের মাধ্যমে পরিবেশের জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে। তবে শুঁয়োপোকা বা লার্ভা অনেক ক্ষেত্রে ফসলের ক্ষতি করে। তবুও প্রজাপতি পরিবেশের সুস্থতা বোঝার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। অতিরিক্ত কীটনাশক, জলবায়ু পরিবর্তন ও বন উজাড়ের কারণে প্রজাপতির সংখ্যা কমে যাওয়া পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। তাই প্রজাপতি সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণ, পরিবেশবান্ধব কৃষি এবং নিরাপদ আবাসস্থল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।