দীঘল চোখের মতো দেখতে নীল রঙের ফুল অপরাজিতা, সৌন্দর্যের পাশাপাশি ঔষধি গুণেও সমানভাবে সমৃদ্ধ। শুধু ফুলবাগানের শোভা বাড়ানোই নয়, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়ও এই ফুলের রয়েছে অসাধারণ গুরুত্ব। প্রকৃতির অনন্য সৃষ্টি এই ফুলটি নীলকণ্ঠ নামেও পরিচিত।
ইতিহাস অনুসারে, মালাক্কা দ্বীপ বা টারনেট থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে অপরাজিতা ফুল। ভারতের কেরালায় এটি পরিচিত শঙ্খপুষ্পী নামে। যদিও ফুলটি সাধারণত নীল রঙের হয়, তবে সাদা, হালকা বেগুনি, হলুদ ও লাল রঙের অপরাজিতাও দেখা যায়।
এই ফুলের লতা, পাতা, শিকড় ও ফুলে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যা মানব শরীরে অবিশ্বাস্যভাবে কাজ করে। যেমন—
🔹 লিভার সুরক্ষা: অপরাজিতার নীল চা-তে থাকা পলিফেনল ও ফ্লাভোনোয়েড যৌগ লিভার এনজাইমের মাত্রা কমিয়ে লিভারকে সুরক্ষা দেয়।
🔹 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: এই ফুল রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
🔹 অ্যাজমা প্রতিরোধ: অপরাজিতায় থাকা স্যাপোনিন ও ফ্লাভোনোয়েড যৌগ শ্বাসনালীর প্রদাহ কমিয়ে অ্যাজমা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
🔹 ক্যানসার প্রতিরোধ: এতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যাল উৎপাদন রোধ করে, ফলে ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক হয়।
🔹 স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি: চিকিৎসকরা আলঝেইমার রোগের চিকিৎসায় অপরাজিতা ব্যবহার করেন, কারণ এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
🔹 হৃদ্রোগ প্রতিরোধ: অপরাজিতা রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড, কোলেস্টেরল ও এলডিএলের পরিমাণ কমিয়ে হৃদ্রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, অপরাজিতা ফুল ও এর উপাদানগুলো বয়ঃসন্ধিকালীন মানসিক সমস্যা, গলগণ্ড, ফোলা, শুষ্ক কাশি, স্বরভঙ্গ ও আধকপালে ব্যথা ইত্যাদি রোগে ব্যবহৃত হয়। প্রাচীন এই ফুলটি সারা বছর ফুটলেও মূলত বর্ষাকালেই বেশি ফোটে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, অপরাজিতা ফুলের রস বা নির্যাস সেবনের ক্ষেত্রে পরিমাণে সংযমী হতে হবে। এক চা চামচের অর্ধেকের বেশি সেবন শরীরে বিষক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত গ্রহণ করা উচিত নয়।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, টিভি নাইন বাংলা