বাঙালির সকাল যেন এক কাপ চা ছাড়া অসম্পূর্ণ। অফিসে যাওয়ার আগে, আড্ডার ফাঁকে কিংবা রাত জাগার ক্লান্তি কাটাতে—চা বা কফিই ভরসা। এক কাপ চা হাতে নিয়ে রাজনীতি থেকে ক্রিকেট, প্রেম থেকে প্রতিবাদ—সব আলোচনা যেন শুরু ও শেষ হয় সেই চায়ের কাপে। তবে এখন আর আগের মতো মাটির ভাঁড়ে চা পাওয়া যায় না, তার জায়গা দখল করেছে কাগজের কাপ বা পেপার কাপ। দেখতে সুবিধাজনক ও সস্তা হলেও, এই কাপে চা বা কফি খাওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যঝুঁকি!
কাগজের কাপের ভেতরে আসলে কী থাকে?
নাম কাগজের কাপ হলেও, এটি শুধুই কাগজ দিয়ে তৈরি নয়। কাপকে জলরোধী ও টেকসই করতে ভেতরে একটি পাতলা প্লাস্টিক বা মোমের প্রলেপ দেওয়া হয়। গরম চা বা কফি ঢালার সময় সেই প্রলেপ গলে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণিকা মিশে যায় পানীয়ের সঙ্গে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
২০২১ সালে ভারতের গবেষক রঞ্জন ভি.পি.-এর নেতৃত্বে Journal of Hazardous Materials-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, গরম পানি কাগজের কাপে রাখলে এর ভেতরের প্লাস্টিক কোটিং থেকে বিপুল পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক পানিতে মিশে যায়।
২০২৩ সালে Chemosphere জার্নালে প্রকাশিত আরেক গবেষণায় বলা হয়, নিয়মিত কাগজের কাপে চা-কফি খেলে একজন মানুষের জীবদ্দশায় বিপুল পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করে, যা দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
যেসব রোগব্যাধি পিছু নিতে পারে
১️⃣ প্রজননক্ষমতায় ক্ষতি:
মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে জমে প্রজনন অঙ্গের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করে। এতে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রভাব পড়ে এবং বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ে।
২️⃣ পেটের সমস্যা:
কাগজের কাপে থাকা রাসায়নিক উপাদান অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। এর ফলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি, হজমের সমস্যা বা ডায়রিয়ার মতো অসুখ দেখা দিতে পারে। নিয়মিত অভ্যাসে এটি দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়।
৩️⃣ শরীরে প্রদাহ ও ক্যানসারের আশঙ্কা:
মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে জমে প্রদাহ বাড়ায়, যা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগের কারণ হতে পারে।
সমাধান কী?
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, মাটির কাপে চা খাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব উপায়। তবে ব্যবহারের আগে অবশ্যই কাপটি ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে, যেন কোনো জীবাণু শরীরে প্রবেশ না করে। দোকানদারকে কাপ ধুয়ে দিতে অনুরোধ করুন—এই ছোট্ট সচেতনতা হয়তো আপনাকে বড় বিপদ থেকে রক্ষা করবে।