সকালের শুরু হোক কিংবা রাতজাগা আড্ডার শেষ—এক কাপ গরম চা বা কফি যেন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অফিসের ব্যস্ততা, ভ্রমণের বিরতি কিংবা শীতের সকাল—যেখানেই হোক না কেন, ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক না দিলে যেন মুহূর্তটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কিন্তু যে পানীয়কে আমরা স্বস্তি ও আনন্দের প্রতীক মনে করি, সেই পানীয়ের অতিরিক্ত তাপমাত্রা হতে পারে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর ঝুঁকির কারণ। গবেষণা বলছে, নিয়মিত খুব গরম চা বা কফি পান করলে খাদ্যনালির ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
আন্তর্জাতিক ক্যানসার গবেষণা সংস্থা (IARC) জানিয়েছে, ৬৫° সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় চা বা কফি পান করলে তা ‘সম্ভাব্য কার্সিনোজেনিক’। দক্ষিণ আমেরিকায় প্রায় ৭০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মেট নামের পানীয় পান করার ফলে স্থানীয়দের মধ্যে খাদ্যনালির ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক বেশি পাওয়া গেছে। একই ধরনের প্রমাণ মেলে আফ্রিকা ও এশিয়ার কিছু দেশেও। সম্প্রতি ব্রিটেনে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা যায়, দিনে আট কাপ বা তার বেশি অতিরিক্ত গরম চা-কফি পানকারীদের খাদ্যনালির ক্যানসারের ঝুঁকি প্রায় ছয় গুণ বেশি।
কিন্তু কীভাবে ক্ষতি করে গরম পানীয়? অতিরিক্ত তাপ খাদ্যনালির কোষে সরাসরি ক্ষত তৈরি করে। দীর্ঘ সময় এ ক্ষতি চলতে থাকলে কোষগুলো ক্যানসার সৃষ্টিকারী হয়ে উঠতে পারে। প্রাণীদের ওপর চালানো পরীক্ষাতেও প্রমাণ মিলেছে, ৭০° সেলসিয়াসের গরম পানি নিয়মিত পান করলে খাদ্যনালিতে প্রি-ক্যানসারাস বৃদ্ধি দ্রুত ঘটে। এছাড়া এ ধরনের ক্ষতি খাদ্যনালির স্বাভাবিক সুরক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করে, ফলে পাকস্থলির অ্যাসিড রিফ্লাক্স হলে কোষে বাড়তি ক্ষতি হয়।
শুধু তাপমাত্রা নয়, খাওয়ার ধরনও ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণা বলছে, যদি বড় চুমুকে (২০ মিলিলিটার) ৬৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রার চা বা কফি পান করা হয়, তবে খাদ্যনালির ভেতরের তাপমাত্রা হঠাৎ ১২° পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। ছোট ছোট সিপে ঝুঁকি কিছুটা কম হলেও বছরের পর বছর বড় চুমুকে গরম পানীয় পান করলে বিপদ বাড়তে পারে।
তাহলে নিরাপদ তাপমাত্রা কত? চা বা কফি বানাতে সাধারণত পানি ৯০° সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম করা হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাদ ও সুরক্ষা দুটো দিক মাথায় রেখে উপযুক্ত তাপমাত্রা হওয়া উচিত প্রায় ৫৭.৮° সেলসিয়াস।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
১. চা বা কফি ফুটন্ত অবস্থায় খাবেন না; অন্তত ৫ মিনিট রেখে দিন। এ সময়ে তাপমাত্রা ১০–১৫° সেলসিয়াস কমে যায়।
২. বড় চুমুক এড়িয়ে ছোট ছোট সিপ নিন।
৩. গলা বা বুকে বারবার জ্বালাভাব হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।