ডায়াবেটিস এখন আর নির্দিষ্ট বয়সের রোগ নয়, বরং এটি ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। শহর থেকে গ্রাম—প্রায় প্রতিটি পরিবারেই কোনো না কোনো ডায়াবেটিস রোগী রয়েছেন। চিকিৎসকদের মতে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, স্থূলতা এবং মানসিক চাপ ডায়াবেটিস বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
আমাদের শরীরে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের হরমোন তৈরি হয়, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো কারণে ইনসুলিন কমে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায় এবং তা ডায়াবেটিসে রূপ নেয়। তবে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে—‘ডায়াবেটিস মানেই পছন্দের খাবার খাওয়া যাবে না।’ আসলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি হলো স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস।
ভারতীয় পুষ্টিবিদ ডা. অর্চনা বাত্রা জানান, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের অর্থ হলো এমন খাবার বেছে নেওয়া, যা রক্তের শর্করা স্থিতিশীল রাখে এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যতালিকায় এই ৫টি পরিবর্তন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকে সহজ করে তুলতে পারে—
১. প্রোটিন ও আঁশসমৃদ্ধ স্ন্যাকস
চিপস বা বিস্কুটের বদলে খান গাজর-শসার স্টিকস সঙ্গে হুমাস, অঙ্কুরিত মুগ, ডালিমের চাট বা কালো ছোলা। এগুলো দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে।
২. মিষ্টি পানীয়র বদলে ইনফিউজড ওয়াটার
সফট ড্রিংক, মিষ্টি চা বা ফলের রসে লুকিয়ে থাকে প্রচুর চিনি। এর বদলে পান করতে পারেন লেবু, বেরি, শসা বা পুদিনা মেশানো পানি কিংবা চিনি ছাড়া হার্বাল চা। আর ফলের রস নয়—খেতে হবে আস্ত ফল, যাতে আঁশ চিনি শোষণকে ধীর করে।
৩. স্টার্চি সবজির বদলে নন-স্টার্চি সবজি
ডায়াবেটিস রোগীদের আলু, ভুট্টার মতো স্টার্চি সবজি এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়ায়। এর বদলে শাক, ব্রকোলি, ফুলকপি, বেল পেপারসহ নন-স্টার্চি সবজি প্লেটে রাখুন।
৪. প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাকসের বদলে বাদাম ও বীজ
চিপসের পরিবর্তে এক মুঠো কাঠবাদাম, আখরোট, চিয়া বা ফ্ল্যাক্স সিড খাওয়া ভালো। এগুলো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন ও আঁশে সমৃদ্ধ এবং রক্তে শর্করার ওঠানামা কমায়।
৫. সাদা শস্যের বদলে পূর্ণ শস্য
সাদা চাল, পাউরুটি বা পাস্তার বদলে ব্রাউন রাইস, কুইনোয়া, হোল-হুইট ব্রেড বা মিলেট বেছে নিন। এগুলো গ্লুকোজ ধীরে শোষিত হতে সাহায্য করে, ফলে হঠাৎ রক্তে শর্করা বেড়ে যায় না।
শেষ কথা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র হলো প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে ছোট ছোট পরিবর্তন আনা। সঠিক খাবার ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাসই পারে সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে।