জাতিসংঘের উদ্যোগে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে নিউইয়র্কে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে আয়োজিত প্রস্তুতিমূলক সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন, মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং শরণার্থী শিবিরের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ নিয়ে আলোচনা হয়। আসিয়ানের ভূমিকা, বিশেষ করে মালয়েশিয়ার শান্তি মিশনের পরিকল্পনাও সেখানে গুরুত্ব পায়। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান কূটনীতিকদের ব্রিফ করতে গিয়ে জানান, এই সম্মেলন রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে এসেছে। খলিলুর রহমান বলেন, একসময় রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক এজেন্ডা থেকে বাদ পড়তে বসেছিল। তবে গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আহ্বান জানালে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এখন আন্তর্জাতিক সমর্থন যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে।
সম্প্রতি অ্যাকশনএইড ইউকের সহায়তায় প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, রোহিঙ্গা নারী ও কন্যাশিশুরা যৌন হয়রানি, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের মতো গুরুতর ঝুঁকিতে রয়েছে। গবেষণায় নারীদের নিরাপদ টয়লেট, আলোযুক্ত গোসলের জায়গা, নারী নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ এবং নারী নেতৃত্বে সুরক্ষা কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শক্তিশালী করা এবং আইনি সহায়তা সহজ করার ওপর জোর দেওয়া হয়।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে রয়েছে—রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য রোডম্যাপ প্রণয়ন, দাতাদের অব্যাহত সহায়তা, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মির কাছে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও জীবিকা নিশ্চিত করার আহ্বান, গণহত্যার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহি ত্বরান্বিত করা এবং আসিয়ানের সক্রিয় ভূমিকা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখন আর শুধু বক্তব্যে সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না; কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু প্রতিবছর প্রায় ৩২ হাজার নতুন শিশু জন্ম নেওয়ায় এবং দীর্ঘ আট বছর ধরে স্থানীয় জনগণের ত্যাগের কারণে সংকট আরও জটিল হচ্ছে। তাই রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে বৈশ্বিক সহযোগিতা অপরিহার্য। ৩০ সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘ সম্মেলন সেই সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।