জীবন মানেই ওঠানামার গল্প— সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, শান্তি-অশান্তির মিশেল। কখনো হৃদয় আনন্দে ভরে ওঠে, আবার কখনো হঠাৎই নেমে আসে দুশ্চিন্তা ও মানসিক অস্থিরতা। এই অস্থিরতা মানুষকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়, ইবাদতে মনোযোগ কমিয়ে দেয় এবং জীবনকে বিষণ্ন করে তোলে। অথচ ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে এমন কিছু সহজ আমল, যা করলে মন শান্ত হয়, হৃদয় প্রশান্ত হয় এবং জীবনের ঝড়-ঝাপটাও সহজ মনে হয়। আল্লাহতায়ালার নৈকট্যই হলো প্রকৃত প্রশান্তির উৎস।
প্রথমত, দোয়া হলো মুমিনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। দোয়ার মাধ্যমে দুঃখ-কষ্ট, দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা দূর হয়ে যায় এবং আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন দোয়া করতেন, যা আমাদের শেখায় দুশ্চিন্তা, দুঃখ, অক্ষমতা, ঋণ ও মানুষের কষ্টদায়ক আচরণ থেকে আশ্রয় চাইতে।
দ্বিতীয়ত, ইখলাস বা একনিষ্ঠতা মানসিক শান্তির অন্যতম রহস্য। মানুষ যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে এবং অন্যের প্রশংসার আশা করে না, তখন তার মন হালকা হয়। কারণ সে জানে প্রতিদান দেবেন একমাত্র আল্লাহই।
তৃতীয়ত, আল্লাহর নিয়ামত নিয়ে চিন্তা করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা প্রতিটি মুহূর্তে অগণিত নিয়ামতের মাঝে বেঁচে আছি। কিন্তু সমস্যা সামনে এলে আমরা নিয়ামত ভুলে যাই। অথচ নিয়ামত বেশি মনে করলে মন শান্ত থাকে এবং অস্থিরতা দূর হয়।
চতুর্থত, আল্লাহর ওপর ভরসা করা হলো ঈমানের মূলভিত্তি। যার অন্তর আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল, সে কখনো হতাশ বা অস্থির হয় না। ইতিহাসে দেখা যায়, নবী-রাসুল ও সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে কঠিন পরীক্ষায় সফল হয়েছেন। কোরআনে এর বারবার উল্লেখ আছে।
সবশেষে, ধৈর্য ধরা মানসিক স্থিতিশীলতার অপরিহার্য উপায়। ধৈর্যশীল মানুষ কখনো ভেঙে পড়ে না, কারণ আল্লাহ তাঁর সাথেই থাকেন। দুশ্চিন্তার সময়ে সালাত ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার নির্দেশ কোরআনে দেওয়া হয়েছে।
অতএব, দোয়া, ইখলাস, নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা, আল্লাহর ওপর ভরসা ও ধৈর্য— এই পাঁচটি আমল একজন মুমিনকে মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি দিয়ে প্রশান্ত ও সুন্দর জীবনের পথে এগিয়ে নেয়।