মাথাব্যথা অনেকের পরিচিত সমস্যা হলেও মাইগ্রেন সাধারণ মাথাব্যথার থেকে অনেকটাই ভিন্ন। এটি শুধু তীব্র ব্যথাই নয়, বরং নানা জটিল উপসর্গও সৃষ্টি করে। ল্যাবএইড হাসপাতালের স্নায়ুরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনসুর আলী মাইগ্রেন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছেন।
মাইগ্রেন সাধারণত মাথার একপাশে মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে, যা বিশেষ করে বাম পাশ বা মাথার পিছনে বেশি হয়। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব, দৃষ্টির সমস্যা, আলো বা শব্দে অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা দেখা দেয়। অনেক সময় অতিরিক্ত ঘাম, ঠান্ডা লাগা, মনোযোগহীনতা, এমনকি পেট ব্যথা বা ডায়রিয়াও হতে পারে। একাধিক উপসর্গ একসঙ্গে উপস্থিত হওয়াই মাইগ্রেনকে আরও জটিল করে তোলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাইগ্রেনের মূল কারণ মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কার্যক্রম, যা স্নায়ু ও রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। অনিয়মিত ঘুম, হরমোন পরিবর্তন (বিশেষ করে নারীদের ঋতুচক্রে), মানসিক চাপ বা হঠাৎ শারীরিক ধকল মাইগ্রেনের উদ্রেক ঘটাতে পারে। এছাড়া খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম—যেমন পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত চা/কফি, ফাস্টফুড গ্রহণ—এবং পরিবেশগত পরিবর্তন যেমন রোদ-ছায়া বা গরম-ঠান্ডা আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনও এর কারণ হতে পারে।
চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে যদি মাথাব্যথা ঘন ঘন হয় বা তীব্রভাবে দেখা দেয়, এক মাসে পাঁচ বারের বেশি অ্যাটাক হয়, বমি বমি ভাবসহ ব্যথা হয়, মুখ বা হাত অবশ হয়ে যায়, কথা জড়ানো শুরু হয় অথবা হঠাৎ নতুন ধরনের ব্যথা দেখা দেয়। তীব্র জ্বরসহ মাথাব্যথা হলেও অবহেলা করা উচিত নয়।
মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন জরুরি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো, অতিরিক্ত আলো বা শব্দ এড়িয়ে চলা, গরম বা ঠান্ডা পরিবেশে সরাসরি না যাওয়া, নিয়মিত পানি পান করা, স্ক্রিন টাইম কমানো, সময়মতো খাওয়া এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা প্রয়োজন। মাথায় ঠান্ডা পানি বা কাপড় ব্যবহার করাও স্বস্তি দিতে পারে।
মনে রাখতে হবে, মাইগ্রেনের নির্দিষ্ট ও স্থায়ী চিকিৎসা নেই। তবে নিয়ম মেনে চলা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়।