শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। একসময় গ্রামবাংলার খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ে নানা রঙের শাপলার সমারোহ দেখা যেত। সাদা, লাল, বেগুনি, হলুদ ও নীল রঙের শাপলার মধ্যে সাদা শাপলাকে জাতীয় ফুল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কালের পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ, জলাশয় ভরাট ও কৃষিজমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে আজ শাপলা হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রকৃতি থেকে।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় শাপলা ফুল একসময় ছিল সর্বত্র। বিলের পানিতে জন্মানো শাপলার লতা মানুষ সবজি হিসেবে খেত। এর ফল ‘ঢ্যাভ’ পুড়িয়ে বা সিদ্ধ করে খাওয়ার প্রচলনও ছিল। শিশুরা শাপলা ফুল দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় পরতো, আবার ঢ্যাভ দিয়ে খই ভেজে নানা সুস্বাদু খাবার তৈরি করতো গ্রামীণ মানুষ। বাজারে বিক্রি করে অনেকে জীবিকার অংশ হিসেবে শাপলার ওপর নির্ভর করতো। শাপলার রয়েছে বহু ওষুধি গুণও।
শাপলা দিনের বেলায় ফোটে এবং সরাসরি কাণ্ড ও মূলের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এর পাতার আকার প্রায় ২০-২৩ সেন্টিমিটার এবং ফুলে থাকে ৪-৫টি বৃতি ও ১৩-১৫টি পাপড়ি। যদিও সারা বছরই শাপলা ফোটে, তবে বর্ষা ও শরৎকাল শাপলার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। একসময় ফেনীসহ দেশের নানা প্রান্তের মাঠ, পুকুর, খাল-বিল শাপলার সৌন্দর্যে ভরে উঠতো। কিন্তু বর্তমানে সাদা শাপলা কিছু এলাকায় দেখা গেলেও লাল, নীল, গোলাপি ও বেগুনি শাপলা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
ইতিহাস গবেষক তুষার কান্তি বসাক জানান, এক দশক আগেও গ্রামবাংলার জলাশয়ে শাপলার বাহারী রূপ দেখা যেত। কিন্তু এখন আর সেই দৃশ্য নেই। জলাশয় দখল, দূষণ, রাসায়নিকের ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, এখনো যদি বীজ সংরক্ষণ ও গবেষণা করা হয়, তবে জাতীয় ফুল শাপলাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
একসময় যে ফুল গ্রামবাংলার সৌন্দর্য, সংস্কৃতি ও জীবিকার অংশ ছিল, সেই শাপলা আজ বিলুপ্তির পথে। প্রজন্মকে আমাদের জাতীয় ফুল বাঁচিয়ে রাখতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।