বর্তমান যুগে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং ও ডিজিটাল লেনদেন একটি নতুন অর্থনৈতিক বিপ্লবের সূচনা করেছে। একজন শিক্ষার্থী, প্রবাসীর পরিবার, কিংবা একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা—সবার জন্যই স্মার্ট ব্যাংকিং কিছু সহজ কৌশল অনুসরণ করে নিজের অর্থ সুরক্ষিত ও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা সম্ভব। নিচে এমনই ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকিং পরামর্শ তুলে ধরা হলো:
১. নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ব্যাংক নির্বাচন করুন
সব ব্যাংকের সেবার ধরন এক নয়। ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধার জন্য ব্র্যাক, ডাচ-বাংলা বা সিটি ব্যাংক ভালো হলেও পেনশনভোগী বা গ্রামীণ অঞ্চলের জন্য সোনালী, অগ্রণী বা জনতা ব্যাংক বেশি উপযোগী।
২. মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে সচেতন হোন
বিকাশ, নগদ বা রকেট ব্যবহার করলে PIN ও OTP কখনো শেয়ার করবেন না। টাকা পাঠানোর আগে প্রাপকের নাম নিশ্চিত করুন এবং সন্দেহজনক লেনদেন থেকে বিরত থাকুন।
৩. আয় ও ব্যয়ের জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন
সঞ্চয়ের জন্য সেভিংস অ্যাকাউন্ট এবং খরচ বা লেনদেনের জন্য চলতি (কারেন্ট) অ্যাকাউন্ট আলাদা রাখলে হিসাব রাখা সহজ হয়। অতিরিক্ত অর্থের জন্য ফিক্সড ডিপোজিটও রাখতে পারেন।
৪. ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু করুন
ইন্টারনেট ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ঘরে বসেই আপনি টাকা স্থানান্তর, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, চেক বইয়ের আবেদন ইত্যাদি করতে পারবেন। তবে, আপনার ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড গোপন রাখুন এবং নিরাপদ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করুন।
৫. ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড বুঝে ব্যবহার করুন
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের আগে তার সুদের হার, ফি ও সীমা জেনে নিন। ডেবিট কার্ড দৈনন্দিন ব্যবহারে নিরাপদ হলেও ATM ব্যবহার করলে কোন ব্যাংকে কত চার্জ কাটে—তা বুঝে লেনদেন করুন।
৬. সুদের হার ও চার্জ সম্পর্কে সচেতন থাকুন
বিভিন্ন ব্যাংকে ডিপোজিটে ২.৫% থেকে ৬% পর্যন্ত সুদ দেওয়া হয়। তবে একাউন্ট মেইনটেনেন্স, লেনদেন ফি, অথবা আন্তর্জাতিক লেনদেনের চার্জ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন এবং চুক্তিপত্র ভালোভাবে পড়ুন।
৭. ঋণ নেওয়ার আগে চিন্তাভাবনা করুন
যেকোনো ধরনের লোন নেওয়ার আগে কত সহজে তা পরিশোধ করতে পারবেন, সুদের হার, কিস্তি সুবিধা ও ব্যাংকের শর্ত যাচাই করে নিন। প্রয়োজনে একাধিক ব্যাংকের অফার তুলনা করুন।
৮. বৈধ পথে রেমিট্যান্স গ্রহণ করুন
বিদেশ থেকে টাকা গ্রহণের সময় Western Union, MoneyGram বা স্থানীয় ব্যাংকের বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করুন। সরকার থেকে ২.৫% ইনসেনটিভ পেতে হলে হুন্ডির মতো অবৈধ পদ্ধতি এড়িয়ে চলুন।
৯. প্রয়োজনীয় তথ্য হালনাগাদ রাখুন
আপনার NID, পাসপোর্ট, TIN ও মোবাইল নম্বর আপডেট রাখলে ব্যাংকিং ঝামেলা কম হবে। KYC তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করাও খুবই জরুরি।
১০. প্রতারণা থেকে সাবধান থাকুন
ব্যাংক কখনো ফোনে বা মেসেজে OTP বা PIN জানতে চায় না। কেউ চাইলে সেটি প্রতারণা—সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে অভিযোগ জানান। পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে বয়স্কদের এসব বিষয়ে সচেতন করুন।
সঠিক তথ্য ও সচেতনতার মাধ্যমে আপনি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নিজের অর্থ নিরাপদ রাখার পাশাপাশি সময় ও খরচও সাশ্রয় করতে পারবেন। নিয়মিত অর্থ ব্যবস্থাপনা ও ব্যাংকিং আপডেট জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের জানাতে ভুলবেন না।