চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রস্রাব (Urine) হলো শরীরের তরল বর্জ্য, যা কিডনি দ্বারা ফিল্টার হয়ে মূত্রাশয়ের মাধ্যমে নির্গত হয়। এটি শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক উপাদান এবং স্বাস্থ্যসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশকও বটে।
প্রস্রাবের পরিমাণ বা ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া যেমন স্বাভাবিক হতে পারে, তেমনি অতিরিক্ততা বা অস্বাভাবিকতা অনেক সময় কিডনি কিংবা মূত্রনালির সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে।
দিনে কতবার প্রস্রাব স্বাভাবিক?
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের গবেষণা অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ব্যক্তির দিনে ৬ থেকে ৭ বার প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক। এটি মূলত নির্ভর করে ব্যক্তির তরল গ্রহণের পরিমাণ, আবহাওয়া এবং দৈহিক সক্রিয়তার ওপর। চিকিৎসকদের মতে, দিনে ৪ থেকে ১০ বার পর্যন্ত প্রস্রাব স্বাভাবিক ধরা হয়। তবে দিনে ১০ বারের বেশি বা মাত্র ৪ বার বা তারও কম প্রস্রাব হলে তা হতে পারে স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ।
ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা (প্রতি ৩০ মিনিটে) অথবা প্রস্রাবের সময় জ্বালা বা ব্যথা অনুভব করা হলে, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মূত্রাশয়ের ধারণক্ষমতা ও সমস্যার কারণ
সাধারণত মূত্রাশয়ে ২০০ মিলিলিটার প্রস্রাব জমলেই বেগ অনুভূত হয়। মূত্রাশয় মোট ৩৫০ থেকে ৫৫০ মিলিলিটার তরল ধরে রাখতে সক্ষম। কিন্তু দীর্ঘসময় প্রস্রাব চেপে রাখলে পেলভিক ফ্লোর পেশি দুর্বল হয়ে যায় এবং এতে চাপ পড়ে মূত্রাশয়ে। এর ফলে দেখা দিতে পারে প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, সংক্রমণ বা হাঁচি-কাশিতে প্রস্রাব বেরিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা।
দিনে ১০ বারের বেশি হলে?
দিনে ১০ বারের বেশি প্রস্রাব হলে তাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয় পলিইউরিয়া। অতিরিক্ত পানি পান, চা-কফির মতো ক্যাফেইনসমৃদ্ধ পানীয় বা অ্যালকোহল গ্রহণ করলে এমন হতে পারে। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় যদি এই পানীয়গুলো বেশি গ্রহণ করা হয়, তবে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।
রাতে প্রস্রাব কতবার স্বাভাবিক?
রাতে একবার বা সর্বোচ্চ দুবার প্রস্রাবের বেগ স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। তবে প্রতি ঘণ্টায় ঘুম ভেঙে প্রস্রাবের প্রয়োজন হলে তা অস্বাভাবিক, যাকে নকচুরিয়া (Nocturia) বলা হয়।
কারা বেশি আক্রান্ত হন নকচুরিয়ায়?
১. অ্যান্টি-সাইকিয়াট্রিক বা কিডনির ওষুধ গ্রহণকারী
২. চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তি, বিশেষ করে বয়স্করা
৩. গর্ভবতী নারী এবং রজোনিবৃত্তির পর নারীরা
৪. হৃদরোগ, কিডনিতে পাথর, বা প্রোস্টেট সমস্যায় আক্রান্তরা
৫. ডায়াবেটিস রোগীরা
৬. থাইরয়েড বা কর্টিসল হরমোন বেশি থাকলে
৭. স্নায়বিক সমস্যা কিংবা মূত্রাশয়ের ক্যানসার আক্রান্তরা
কী করবেন?
প্রস্রাবজনিত সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনাও জরুরি। যেমন:
চা-কফি ও ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় কমিয়ে আনা
অ্যালকোহল পরিহার
অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা
নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটা, সাঁতার ও যোগব্যায়াম করা
এসব অভ্যাস পেলভিক পেশি শক্তিশালী করে এবং মূত্রাশয়ের কার্যকারিতা উন্নত করে।