বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত আগস্ট মাসে সৌদি থেকে এসেছে ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। যুক্তরাজ্য দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ২৭ কোটি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার ডলারের মাধ্যমে এবং তৃতীয় অবস্থানে মালয়েশিয়া ২৭ কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার পাঠিয়েছে। শুধু আগস্টেই মোট ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রায় ৩৬ শতাংশই সৌদি আরবে অবস্থান করে, যা রেমিট্যান্স বৃদ্ধির মূল কারণ। ১৯৭৬ সাল থেকে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকরা বিদেশ যেতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৮ লাখ শ্রমিক সৌদি আরব গিয়েছে। যদিও তাদের মধ্যে অনেকে ফিরে এসেছে, তবু বর্তমানে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সৌদিতে প্রায় ২৬ লাখ বা তারও বেশি শ্রমিক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
সৌদি আরব শ্রমিকদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয় হওয়ার কয়েকটি কারণ হলো—
ধর্মীয় দিক: এটি ইসলামের তীর্থভূমি, যেখানে হজ ও ওমরাহ সহজে করা যায়।
শ্রমবাজার উন্মুক্ত: সৌদি আরব কখনো বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ করেনি।
সহজ কাজ পাওয়া: অভিজ্ঞতা ছাড়াই কাজ করার সুযোগ আছে।
সামাজিক নেটওয়ার্ক: একই গ্রামের বা পরিবারের লোকজন একে অপরকে নিয়ে যাচ্ছে, ফলে কাজ পেতে সুবিধা হচ্ছে।
সাংস্কৃতিক স্বাচ্ছন্দ্য: মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ায় বাংলাদেশিরা স্বস্তি বোধ করেন।
সহজ ভিসা ও যাতায়াত ব্যবস্থা।
এই সব কারণে সৌদিতে শ্রমিক সংখ্যা বেশি এবং স্বাভাবিকভাবেই রেমিট্যান্সও বেশি আসে। তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অনেক প্রবাসী অবৈধ হয়ে পড়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ধীরে ধীরে কমছে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের নজরদারি বাড়ানো জরুরি।
অন্যদিকে, মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ দিন দিন বাড়ছে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার নতুন শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গিয়েছে, বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের আগস্টে অষ্টম অবস্থানে থাকা দেশটি বর্তমানে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। আগামী ৬ বছরে আরও ১২ লাখ শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ার বৈশিষ্ট্য হলো, সেখানে অদক্ষ শ্রমিকদেরও সহজে কাজ মেলে।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া নয়, আরও নতুন দেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে হবে। দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে পারলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে, যা দেশের উন্নয়নে বড় অবদান রাখবে।