রংপুরের পীরগাছা সদর ও পারুল ইউনিয়নে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেওয়া ১২ জনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। পরীক্ষায় তাদের মধ্যে ৮ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন।
এর আগে গণমাধ্যমে পশুবাহিত অজানা রোগে মানুষ আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হলে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ দপ্তর নড়েচড়ে বসে। পরে আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল গত ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে গিয়ে উপসর্গযুক্ত রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে। একই সময় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে পীরগাছায় দুজনের মৃত্যু হয়। এ সময় চারটি ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক মানুষ আক্রান্ত হন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসুস্থ গরুর মাংস খাওয়া বা সংস্পর্শে আসার পর মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরীক্ষাগারে সংগৃহীত মাংসের নমুনায়ও অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছিল।
পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন রোগীর তথ্য তাদের হাতে আছে। এর মধ্যে ৩০ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং অধিকাংশই অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে সাম্প্রতিক দুটি মৃত্যুর কারণ সরাসরি অ্যানথ্রাক্স নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
চিকিৎসকদের মতে, আক্রান্ত গবাদি পশুর রক্ত, মাংস, শ্লেষ্মা বা নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলে মানুষ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হতে পারে, তবে এ রোগ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। প্রধান উপসর্গ হলো চামড়ায় ঘা তৈরি হওয়া।
রংপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. রুহুল আমিন জানান, শুধু পীরগাছাই নয়, মিঠাপুকুর ও কাউনিয়াতেও অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা গেছে। নতুন করে আরও আটজনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবায়োটিক মজুত রয়েছে এবং রোগীদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দুই মাসে অ্যানথ্রাক্সে শতাধিক গবাদি পশু মারা গেছে। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ জানিয়েছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জেলার ১৩ লাখের বেশি গবাদি পশুর মধ্যে ইতোমধ্যে প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজারটিকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদ, মন্দির ও হাটবাজারে সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে।
চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের মতে, অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হলো মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুকে নিয়মিত টিকা দেওয়া।