ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর তুরস্কজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিরোধী দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে “স্বৈরশাসনের” অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ করছে। আন্তর্জাতিক মহলও তুরস্কের গণতান্ত্রিক অবনতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ইমামোগলু গ্রেপ্তার ও বিক্ষোভ
গত সপ্তাহে বিরোধী দলীয় নেতা ও ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। তার গ্রেপ্তারের পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, অভিযোগ করে যে এরদোয়ান বিরোধী কণ্ঠ চেপে দিচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক সমালোচনা
ইইউ ও জার্মানি তুরস্ককে গণতান্ত্রিক নীতিমালা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। জার্মান সরকারের বক্তব্য, “রাজনৈতিক বিরোধিতা আদালতের কাঠগড়ায় নয়, জনগণের ভোটে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।” অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো সংস্থাগুলোও এরদোয়ানের দমন-পীড়ন নীতির নিন্দা করেছে।
এরদোয়ানের রাজনৈতিক যাত্রা: উন্নয়ন থেকে কর্তৃত্ববাদ
২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এরদোয়ান তুরস্কের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে থাকেন:
- ২০১৩: গেজি পার্ক বিক্ষোভ দমন করে বিরোধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন।
- ২০১৬: ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর হাজার হাজার সামরিক কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও বিরোধী নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
- ২০১৮: সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত হয়।
মিডিয়া দমন ও বিচারব্যবস্থার রাজনীতিকরণ
বর্তমানে তুরস্কে স্বাধীন সংবাদমাধ্যম প্রায় অনুপস্থিত। নির্বিচারে সমালোচনামূলক সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার ও মিডিয়া কর্মীদের আটক করা হচ্ছে । ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর অন্তত ৯ জন সাংবাদিক আটক হয়েছেন।
এরদোয়ানের ভবিষ্যৎ: জনরোষ ও অর্থনৈতিক চাপ
অর্থনৈতিক মন্দা ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে জনগণের অসন্তোষ বাড়ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এরদোয়ানের কঠোর নীতি দীর্ঘমেয়াদে তার জনপ্রিয়তাকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে। তবে এখনও তিনি একে পার্টি, নিরাপত্তা বাহিনী ও বিচারব্যবস্থার সমর্থনে দৃঢ়ভাবে ক্ষমতায় রয়েছেন।
তথ্যসূত্র: ডয়েচে ভেলে, রয়টার্স