বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব যেমন বাড়ে, তেমনি চাপও বেড়ে যায়। কর্মজীবন, সংসার, সন্তান লালনপালন—সব মিলিয়ে জীবনের গতি বাড়তে থাকে বহুগুণে। বিশেষ করে ৩০ বছরের পর থেকে অনেকেই বুঝতে পারেন, নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত বিশ্রাম বা নিজের জন্য কিছুটা শান্ত সময় বের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। অথচ চিকিৎসকদের মতে, শরীরের মতো মস্তিষ্কেরও নিয়মিত যত্ন নেওয়া জরুরি। কারণ মস্তিষ্কই হলো চিন্তা, স্মৃতি, আবেগ ও সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র। তাই মস্তিষ্ককে দীর্ঘদিন সতেজ ও সক্রিয় রাখতে চাই সচেতন অভ্যাস।
ভারতের নিউরোলজিস্ট ডা. প্রশান্ত মাখিজা ও ডা. শিবকুমার জানিয়েছেন, কয়েকটি সহজ অভ্যাস মেনে চললেই মস্তিষ্ক দীর্ঘসময় কর্মক্ষম ও সৃজনশীল থাকতে পারে।
১. পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ
মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকারিতার জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, কোএনজাইম কিউ ও ভিটামিন-ডি অপরিহার্য। এসব পুষ্টির অভাব উদ্বেগ, স্মৃতিভ্রংশ ও মনোযোগ কমার মতো সমস্যা তৈরি করে। সঠিক পুষ্টি শুধু স্মৃতিশক্তি বাড়ায় না, মানসিক চাপও কমায়।
২. মাইন্ডফুল ডিটক্স
ডিজিটাল স্ক্রিন আর কর্মচাপ মস্তিষ্ককে ক্রমাগত ক্লান্ত করে। প্রতিদিন কিছুটা সময় প্রযুক্তি থেকে বিরতি নিয়ে বই পড়া, নিরিবিলি সময় কাটানো বা ধ্যান করা মস্তিষ্ককে পুনর্জীবিত করে।
৩. শারীরিক, মানসিক ও আবেগীয় ফিটনেস
নিয়মিত ব্যায়াম ও স্ট্রেন্থ ট্রেনিং রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। অন্যদিকে যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা জার্নালিং মানসিক স্থিতিশীলতা আনে এবং নতুন মস্তিষ্ক কোষ গঠনে সাহায্য করে।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম
গভীর ঘুম মস্তিষ্কের জন্য ওষুধের মতো কাজ করে। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, স্মৃতি সংরক্ষণ করে এবং নতুন দিনের জন্য প্রস্তুত হয়। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ঘুম অপরিহার্য।
৫. সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা
পরিবার, বন্ধু বা পরিচিতজনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ মনের পাশাপাশি মস্তিষ্ককেও সক্রিয় রাখে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকা একাকিত্ব কমায়, চাপ হ্রাস করে এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
শেষকথা
এখন থেকেই যদি সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক প্রশিক্ষণ ও সামাজিক যোগাযোগকে জীবনের অংশ করা যায়, তবে মস্তিষ্ককে দীর্ঘদিন তরতাজা ও কর্মক্ষম রাখা সম্ভব।