ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য সুরক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় অবশেষে ক্ষতিপূরণ প্রদান শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এনবিসি শিকাগোর তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই কিছু ব্যবহারকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের অর্থ পৌঁছাতে শুরু করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত ২০০৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে, যখন ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮ কোটি ৭০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে রাজনৈতিক ও বিজ্ঞাপনমূলক কাজে ব্যবহার করেছিল। এ ঘটনায় ব্যবহারকারীদের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়া এবং তৃতীয় পক্ষের কাছে তথ্য যাওয়ার ওপর নজরদারি না রাখায় ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালতে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা ও ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মেটা ৭২৫ মিলিয়ন ডলারের সমঝোতায় রাজি হয়, যাতে মামলাটি বিচার পর্যন্ত না গড়ায়। যদিও ২০২৩ সালে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, আইনি জটিলতার কারণে তা পিছিয়ে যায়। অবশেষে সব বাধা কাটিয়ে এবার ক্ষতিপূরণ বিতরণ শুরু হয়েছে।
কারা ক্ষতিপূরণ পাবেন?
ক্ষতিপূরণের আওতায় থাকছেন মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। যাদের ২০০৭ সালের ২৪ মে থেকে ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে একটি সক্রিয় ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ছিল, তারা এই অর্থ পাওয়ার যোগ্য। এমনকি এই সময়ে যাদের অ্যাকাউন্ট ছিল কিন্তু বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে, তারাও আবেদন করে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাংলাদেশসহ অন্য কোনো দেশের ব্যবহারকারীরা এই সুবিধা পাবেন না।
কত টাকা মিলবে?
ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণে একটি পয়েন্ট সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। মীমাংসা তহবিল থেকে আইনি ও প্রশাসনিক খরচ বাদ দিয়ে যে অর্থ থাকবে, সেটিই হবে ‘নেট ফান্ড’। এরপর ব্যবহারকারীর সক্রিয় থাকার সময়কাল অনুযায়ী প্রতি মাসে একটি করে পয়েন্ট ধরা হবে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি ১০ বছর ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন, তবে তিনি পাবেন ১২০ পয়েন্ট। পয়েন্ট যত বেশি, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ তত বেশি। অর্থ প্রদান করা হবে সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, পেপ্যাল, ভার্চুয়াল প্রিপেইড মাস্টারকার্ড, ভেনমো বা চেকের মাধ্যমে।
এই ক্ষতিপূরণ ঘটনা আবারও প্রমাণ করেছে যে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম, এবং বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।