মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তেও যুদ্ধবিমানটির পাইলট, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর, কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে শেষবারের মতো যোগাযোগ করেছিলেন। কণ্ঠে আতঙ্ক নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘বিমান ভাসছে না… মনে হচ্ছে নিচে পড়ছে।’
ঘটনাটি ঘটেছিল সোমবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে। কুর্মিটোলার পুরাতন বিমানঘাঁটি থেকে এফটি-৭ যুদ্ধবিমান নিয়ে ‘সোলো ফ্লাইট’ করেছিলেন তৌকির। এটি ছিল তার প্রথম একক উড্ডয়ন, যা পাইলট প্রশিক্ষণের সর্বশেষ ও সবচেয়ে জটিল ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ধাপে পাইলটকে একা, কোনো প্রশিক্ষক বা সহকারী ছাড়াই বিমান পরিচালনা করতে হয়।
উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই যুদ্ধবিমানটি উত্তরা, দিয়াবাড়ি, বাড্ডা, হাতিরঝিল ও রামপুরার আকাশসীমায় প্রবেশ করে। তখনই বিমানটির আচরণ অস্বাভাবিক হতে থাকে। কন্ট্রোল রুমকে তৌকির জানান, বিমান নিয়ন্ত্রণে থাকছে না।
তাৎক্ষণিকভাবে কন্ট্রোল রুম থেকে তাকে ইজেক্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিমানটি রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যান। তিনি সর্বোচ্চ গতিতে সেটিকে বেসে ফিরিয়ে আনতে চাইছিলেন। কিন্তু এর মাঝেই কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
মাত্র এক থেকে দেড় মিনিটের ব্যবধানে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাদে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনাটি দেশের সামরিক ও বেসামরিক মহলে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণ ফ্লাইট সাধারণত জনবসতি থেকে দূরে পরিচালিত হয়। তবে ‘সোলো ফ্লাইট’ নগরাঞ্চলের আকাশপথেই হয়ে থাকে। এই ধাপের জন্য পাইলটের সর্বোচ্চ দক্ষতা ও মানসিক দৃঢ়তা প্রয়োজন হয়— যা তৌকিরের মধ্যে ছিল বলেই তিনি এই ধাপে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।