“বাই নাও পে লেটার” (BNPL) স্কিমের নামে বাংলাদেশের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো প্রতারণার নতুন মডেল চালু করেছে। এই সুবিধার আবরণে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলে ৩০০% পর্যন্ত সুদ আদায়, জাল জরিমানা ও পণ্য বিতরণে ধোঁকাবাজির অভিযোগ উঠেছে। গত ৬ মাসে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে (এনসিআরপি) এমন ১,২০০+ অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে।
________________________________________
BNPL স্কিম কীভাবে কাজ করে?
প্রলোভন: “এখন কিনুন, পরে পরিশোধ করুন” – ০% সুদের অফার
বাস্তবতা:
লুকানো ফি (প্রসেসিং চার্জ, ডেলিভারি ফি) যোগ হয়ে মোট মূল্য ২০০-৩০০% বেড়ে যায়
৩-১২ কিস্তির মধ্যে সপ্তাহে ২৫% জরিমানা (যদি এক কিস্তি বাকি পড়ে)
ক্রেডিট স্কোর নষ্ট হলে ভবিষ্যতে ব্যাংক লোন বন্ধ
________________________________________
প্রতারণার প্রধান কৌশল
প্ল্যাটফর্ম পদ্ধতি ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা (২০২৪)
ইভ্যালি অপ্রাপ্ত পণ্য + জাল জরিমানা ৪৫০+
দারাজ ভুয়া কিস্তি পরিকল্পনা ৩২০+
অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি ৪০০+
1.আক্রান্তের গল্প:
রাজশাহীর শিক্ষার্থী আরিফ (২২) ১৫,০০০ টাকার ফোন কিনে ৪৮,০০০ টাকা পরিশোধ করছে (৩২০% অতিরিক্ত খরচ)।
ঢাকার গৃহিণী ফারহানা ৬ মাস ধরে ইভ্যালির জরিমানা পরিশোধ করছেন, যদিও পণ্যটি কখনো পেলেন না।
________________________________________
2.আইনি শূন্যতা ও দায়িত্বহীনতা
BNPL-এর জন্য কোনো রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক নেই (বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও নীতিমালা প্রণয়ন করেনি)।
ই-কমার্স নীতিমালা ২০২১ শুধু পণ্য বিতরণের সময়সীমা নির্ধারণ করে, কিস্তি স্কিমকে নিয়ন্ত্রণ করে না।
৯০% ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা চুক্তির ছোট প্রিন্ট না পড়েই সাইন করেন।
________________________________________
3.বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
অধ্যাপক তানভীর আহমেদ (ব্যবসায় নীতিবিদ, ঢাবি):
“BNPL আসলে আধুনিক কালো টাকার ফাঁদ। গ্রাহকরা বুঝতে পারেন না, তারা আসলে ৩০০% সুদে ঋণ নিচ্ছেন।”
এনসিআরপি চেয়ারম্যান:
“গত মাসে আমরা ইভ্যালি ও দারাজের বিরুদ্ধে ৫৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছি, কিন্তু তারা আপিল করেছে।”
________________________________________
4.গ্রাহকদের জন্য জরুরি পরামর্শ
1. BNPL এড়িয়ে চলুন: নগদ/কার্ডে পেমেন্ট করুন।
2. চুক্তি পড়ুন: লুকানো ফি (Processing Fee, Late Fee) খুঁজে দেখুন।
3. অভিযোগ করুন: এনসিআরপি হটলাইন ১৬১২৩ বা মোবাইল অ্যাপে রিপোর্ট করুন।
________________________________________
5.সরকারি পদক্ষেপের দাবি
BNPL-এর জন্য জরুরি নীতিমালা প্রণয়ন (সুদের সীমা ১৫% এ ক্যাপ করা)।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর লাইসেন্স বাতিলের ক্ষমতা এনসিআরপিকে দেওয়া।
সাইবার ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা।
________________________________________
সতর্কতা:
⚠ ২০২৫ সালের মধ্যে BNPL সম্পর্কিত অভিযোগ ৩০০% বৃদ্ধি পেতে পারে (ভোক্তা অধিকার সংস্থার প্রক্ষেপণ)।
সূত্র: এনসিআরপি, বাংলাদেশ ব্যাংক, ভুক্তভোগীদের সাক্ষাৎকার