বাংলাদেশের শাড়ির ঐতিহ্য, সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে আয়োজন করা হয় এক অনন্য শাড়ি প্রদর্শনী। মনোমুগ্ধকর এই আয়োজনে অংশ নেন তুরস্কে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের পরিবারবর্গ, আন্তর্জাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ হ্যান্ডলুম শিল্প ও বুননশৈলীর রঙিন জগৎ সরাসরি উপভোগের সুযোগ পান।
প্রদর্শনীতে ছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা ঐতিহ্যবাহী শাড়ির এক মনোরম সমাহার। সূক্ষ্ম হ্যান্ডলুম বুনন, জ্যামিতিক ও ফুলেল নকশায় তৈরি ইউনেস্কো স্বীকৃত জামদানি, রাজশাহী সিল্কের উজ্জ্বল রঙ, টাঙ্গাইল তাঁতের হালকা বুনন, পুনর্জাগরিত ঐতিহাসিক মসলিন—সব মিলিয়ে প্রদর্শনীটি যেন এক বুননশিল্পের উৎসব। এছাড়া উৎসব ও বিয়ের জন্য উপযোগী কাতান, জরি ও রেশমের ঢাকাই বেনারসি, সিলেটের মনিপুরী, নকশিকাঁথা শাড়ি এবং ঐতিহ্যবাহী গরদ শাড়ি ছিল বিশেষ আকর্ষণ। এসব শাড়ির ইতিহাস, নকশা ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব নিয়ে প্রদর্শিত ভিডিওচিত্র অতিথিদের কাছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে আরও জীবন্ত করে তোলে।
বাংলাদেশি শাড়ির রঙ, নকশা ও কারুকার্যে মুগ্ধ হয়ে অনেক বিদেশি অতিথি নিজেরাই শাড়ি পরে অংশ নেন একটি ছোট্ট ফ্যাশন শোতে। কেউ কেউ ‘বৌয়ের সাজে’ সাজেন এবং আনন্দের সঙ্গে ছবি তোলেন। অনেকে এই শাড়ি সংগ্রহ করে স্যুভেনির হিসেবে নিজ দেশে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিণী স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁত ও কারুশিল্পের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ ধরনের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
প্রদর্শনীর শেষে অতিথিদের জন্য পরিবেশন করা হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার, যা সবাই প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের আতিথেয়তা, খাবার ও সংস্কৃতির মিশেলে এই আয়োজন হয়ে ওঠে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
বাংলাদেশ দূতাবাসের এই উদ্যোগ কেবল একটি সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী নয়; এটি ছিল সংস্কৃতির মাধ্যমে বন্ধুত্বের এক সেতুবন্ধন। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিদেশি অতিথিরা বাংলাদেশের হ্যান্ডলুম শিল্প, বুননশৈলী ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হন, যা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের শাড়ি ও হস্তশিল্পের চাহিদা বাড়াতে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে এটি স্থানীয় তাঁতিদের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে তুলতে পারে এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হ্যান্ডলুম শিল্পের বিকাশে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।