দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে রোপা আমন ফসল নির্বিঘ্নে উৎপাদনের লক্ষ্যে ক্ষতিকর বালাই পর্যবেক্ষণ ও দমনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘আলোক ফাঁদ’। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে চালু হওয়া এ কার্যক্রম কৃষকদের জন্য সফলতা বয়ে এনেছে। কম খরচে উৎপাদন বাড়বে বলে আশাবাদী কৃষকরা স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে বিনোদনগর ইউনিয়নের খামারদেবীপুর মাঠে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম ইলিয়াস কৃষকদের সামনে আলোক ফাঁদের কার্যকারিতা ও প্রয়োগ পদ্ধতি তুলে ধরেন। এসময় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কেরামত আলী, উপসহকারী তাপস কুমার সরকার, মুকুল বাবু, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোক ফাঁদ মূলত ধানের পোকা দমনে একটি সহজ ও পরিবেশবান্ধব কৌশল। বাঁশের খুঁটি, বৈদ্যুতিক বাল্ব ও সৌর বিদ্যুতের সোলার প্যানেল ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়। খুঁটির সাহায্যে মাটি থেকে ২-৩ ফুট ওপরে একটি বাল্ব জ্বালানো হয়, যার নিচে রাখা হয় ডিটারজেন্ট মিশ্রিত বা কেরোসিনযুক্ত পানি। সন্ধ্যার পর আলোয় আকৃষ্ট হয়ে ধানক্ষেতের পোকামাকড় পানিতে পড়ে যায়। খুব অল্প খরচে তৈরি এই ফাঁদ ব্যবহার করে কৃষকরা বেশ উপকৃত হচ্ছেন।
কৃষক সুজাউদ দোউলা জানান, গত বছর পোকায় ফসলের ক্ষতি হলেও এবার আলোক ফাঁদের মাধ্যমে সহজেই পোকা শনাক্ত করে সঠিক সময়ে ওষুধ প্রয়োগ করতে পারছেন। কৃষক মমিনুল ইসলামও জানান, কীটনাশক দিয়েও আগে ভালো ফল পাওয়া যেত না, কিন্তু আলোক ফাঁদের কারণে এখন সঠিকভাবে প্রতিকার সম্ভব হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম ইলিয়াস বলেন, এ পদ্ধতিতে সহজে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়, ফলে সঠিক সময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় এবং কীটনাশকের ব্যবহারও কমে আসে। এতে কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমবে এবং ফসলের উৎপাদন বাড়বে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা নিয়মিত আলোক ফাঁদ পর্যবেক্ষণ করছেন ও কৃষকদের সম্পৃক্ত করছেন।
উল্লেখ্য, নবাবগঞ্জ উপজেলায় গত বছর ২১ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৭২৯ হেক্টরে।