টানা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে খুলে দেওয়া হচ্ছে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে পর্যটক, বাওয়ালি, জেলে ও মৌয়ালরা আবারও প্রবেশাধিকার পাবেন বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনে। জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বন্য প্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুমে প্রতিবছর জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখে বন বিভাগ। এবারও সেই নিয়ম মেনে তিন মাস বন্ধ থাকার পর নতুন উদ্যমে শুরু হতে যাচ্ছে সুন্দরবনে পর্যটন ও মাছ ধরার কার্যক্রম।
খুলনার ট্যুর অপারেটররা ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। নতুন রং করা হয়েছে পর্যটকবাহী জাহাজগুলো। জানা গেছে, খুলনার জেলখানা ঘাট থেকে ছোট-বড় প্রায় ৭০টি জাহাজ সুন্দরবনে যাতায়াত করে। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে কটকা, কচিখালী, করমজল, হারবাড়িয়া ও আন্ধারমানিকসহ ১১টি পর্যটনকেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মৎস্যজীবীরাও অনুমতিপত্র নিতে ভিড় করছেন ফরেস্ট স্টেশনগুলোতে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন (টোয়াস) সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তাদের অধীনে রয়েছে ৬৫টি রেজিস্ট্রেশনভুক্ত লঞ্চ। এছাড়া আরও কয়েকটি নতুন লঞ্চ যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রায় ২০০ ট্যুর গাইডের মাধ্যমে ভ্রমণ পরিচালিত হয়। জনপ্রতি দেশি পর্যটকের জন্য বন বিভাগকে দিতে হয় ১,০৫০ টাকা, আর বিদেশিদের ক্ষেত্রে এই ফি ১০,৫০০ টাকা। তিন রাত-দুই দিন অথবা দুই রাত-তিন দিনের ভ্রমণ প্যাকেজের ভাড়া জনপ্রতি ৭-৮ হাজার থেকে ২২-২৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটনকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় লোকসমাগম না থাকায় হরিণ ও বানরের সংখ্যা বেড়েছে। এখন সকাল-বিকেলে সহজেই হরিণের দৌড়ঝাঁপ দেখা যায়। তিনি আরও জানান, ১ সেপ্টেম্বর থেকে পর্যটক ও জেলেদের অনুমতিপত্র ইস্যু শুরু হবে।
অন্যদিকে, টোয়াসের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম ডেভিড বলেন, “দীর্ঘ বিরতির পর সুন্দরবন আবার খুলে দেওয়ায় আমরা অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। প্রথম দিনই ৪-৫টি জাহাজ পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে।”
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর সুন্দরবন দিনে-রাতে ছয়বার রূপ বদলায়। প্রায় ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বন ভোরে এক রূপ, দুপুরে আরেক রূপ, আবার সন্ধ্যা ও চাঁদনি রাতে ভিন্ন এক মোহনীয়তায় সাজে। কচিখালী সমুদ্রসৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করার বিশেষ সুযোগ রয়েছে।
প্রতিবছর সুন্দরবন থেকে ২৫-৩০ লাখ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। মৌয়াল, জেলে ও বাওয়ালিদের জীবিকা যেমন এ বনের ওপর নির্ভরশীল, তেমনি দেশের পর্যটন অর্থনীতিতেও এর বড় অবদান রয়েছে। ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনের কয়েকটি এলাকা বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয়। বর্তমানে সুন্দরবনে রয়েছে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড ও প্রায় ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, যার মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও ইরাবতী ডলফিন বিশ্বখ্যাত।