২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। দেশে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। তবে পুরস্কারপ্রাপ্তির পর এক বিস্ময়কর সিদ্ধান্তে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন—এই পুরস্কার তিনি উৎসর্গ করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (X)-এ একটি পোস্টে মারিয়া লেখেন, “এই পুরস্কার আমি উৎসর্গ করছি ভেনেজুয়েলার দুঃখ-ক্লিষ্ট জনগণ এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে—যিনি আমাদের সংগ্রামে দৃঢ় সমর্থন দিয়েছেন।”
পুরস্কারপ্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় তিনি আরও বলেন, “ওহ মাই গড… আমার কোনো ভাষা নেই। এটা শুধু আমার নয়, পুরো জাতির সংগ্রামের স্বীকৃতি। আমি কেবল একজন প্রতিনিধি, একা এই সম্মানের যোগ্য আমি নই।”
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও, হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র স্টিভেন চেউং এক্সে এক পোস্টে নোবেল কমিটিকে সমালোচনা করে লেখেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মানবিক হৃদয়ের অধিকারী। তার মতো দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির মানুষ আর কেউ নেই, যিনি শুধু তার সংকল্প দিয়ে পাহাড়ও টলিয়ে দিতে পারেন। নোবেল কমিটি প্রমাণ করেছে, তারা শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়।”
নরওয়ের নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান জর্গেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস জানান, “মারিয়া কোরিনা মাচাদো ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং একনায়কতন্ত্র থেকে শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্রে রূপান্তরের জন্য অক্লান্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন—এ কারণেই তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য।”
ফ্রাইডনেসকে ট্রাম্পকে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “নোবেল কমিটির সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রতি বছর আমরা হাজার হাজার সুপারিশপত্র পাই, কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় একমাত্র আলফ্রেড নোবেলের উদ্দেশ্য ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে।”
এদিকে, ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি অন্তত আটটি বড় আন্তর্জাতিক সংঘাতের মীমাংসা করেছেন, যা তাকে নোবেল পুরস্কারের যোগ্য করে তোলে। যদিও বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, এ বছর তিনি না পেলেও ভবিষ্যতে ট্রাম্পের হাতে শান্তির নোবেল উঠতে পারে। সুইডেনের অধ্যাপক পিটার ভ্যালেনস্টেইনও একই মত প্রকাশ করেছেন।
এই ঘোষণা ঘিরে এখন বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনার ঝড়—একদিকে মাচাদোর সাহসী লড়াই ও অর্জন, অন্যদিকে তার পুরস্কার উৎসর্গের অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত, যা বিশ্বরাজনীতির নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।