বিশ্ব মহাকাশ গবেষকদের নজর এখন একটি অস্বাভাবিক গ্রহাণু—ওয়াইআর৪–এর দিকে। এটি পৃথিবীর নয়, বরং চাঁদের দিকে ধেয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকদের মতে, যদি এটি চাঁদে আঘাত হানে, তাহলে এর কিছু ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর দিকেও ছিটকে আসতে পারে।
গ্রহাণুটি প্রথম শনাক্ত হয় ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর, হাওয়াইয়ের একটি বিশেষ মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে। এরপর ২০২৫ সালের মে মাসে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এর আকার নির্ধারণ করা হয়। বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী, এর দৈর্ঘ্য ১৭৪ থেকে ২২০ ফুট—অর্থাৎ প্রায় ১০ তলা একটি ভবনের সমান।
ওয়াইআর৪ প্রতি চার বছর পর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এর গতি ও গতিপথ এতটাই ব্যতিক্রমধর্মী যে এটি এখন গবেষকদের বিশেষ আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
আঘাতের সম্ভাবনা বাড়ছে
নাসা জানিয়েছে, ২০৩১ সালে এই গ্রহাণুটি চাঁদে আঘাত হানতে পারে, এবং সেই সম্ভাবনা এখন দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশে। আগের তুলনায় এটি অনেকটাই বেশি।
ফেব্রুয়ারি ২০২৫: সম্ভাবনা ছিল ১.৭%
এপ্রিল ২০২৫: বেড়ে দাঁড়ায় ৩.৮%
বর্তমান (জুন ২০২৫): আরও বেড়ে ৪.৩%
এই ধরণের আঘাত প্রায় এক হাজার বছরে একবারই ঘটে বলে জানিয়েছে নাসা। ফলে এটি একটি মহাজাগতিক বিরল ঘটনা হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
কী ঘটতে পারে চাঁদে?
যদি ওয়াইআর৪ চাঁদে আঘাত হানে, তাহলে চাঁদের ভূ-প্রকৃতিতে কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটতে পারে। এটি বিজ্ঞানীদের জন্য একটি দুর্লভ পর্যবেক্ষণ সুযোগ তৈরি করবে। এমনকি সাধারণ মানুষও হয়তো দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচারে এই দৃশ্য উপভোগ করতে পারবে।
২০২৮ সালে আরও কাছাকাছি আসবে
এই গ্রহাণুটি আবার ২০২৮ সালের ডিসেম্বর মাসে পৃথিবীর আরও কাছাকাছি আসবে। তখন এর গতিপথ আরও স্পষ্ট বোঝা যাবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। সেই সময় এটির গতি ও আচরণ বিশ্লেষণ করে চূড়ান্তভাবে অনুমান করা যাবে, এটি আদৌ চাঁদে আঘাত হানবে কি না।
ওয়াইআর৪ গ্রহাণু বর্তমানে বৈজ্ঞানিক গবেষণার এক কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে উঠেছে। যদি এটি চাঁদে আঘাত হানে, তাহলে তা হবে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত—যা বিজ্ঞান, ইতিহাস এবং সাধারণ মানুষের কল্পনাকেও প্রভাবিত করবে।